Home কলকাতা পরিবারের শেকড় থাকায় আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে: অমর্ত্য সেন

পরিবারের শেকড় থাকায় আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে: অমর্ত্য সেন

কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক জনসভায় ভাষাগত সহিষ্ণুতাহীনতা এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষভাবে তিনি বাংলাভাষীদের প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে চলমান হয়রানি ও অসম্মানের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাংলাভাষী মানুষকে বাংলাদেশি সন্দেহে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রসঙ্গে হালকা রসিকতার সঙ্গে সেন বলেন, “পরিবারের শেকড় থাকায় আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে। খবরের কাগজে দেখেছি বাংলায় কথা বলার জন্য একজনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এটি আমাকে চিন্তায় ফেলেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ফরাসি ভাষায় কথা বলবো, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি ফরাসি জানি না।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী পেশাগতভাবে বাধার মুখোমুখি হচ্ছে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা যথাযথ সম্মান পাচ্ছে না। সেনের বক্তব্য, “বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিহাসকে সম্মান করতে হবে। যদি তা না হয়, প্রতিবাদ জরুরি।”

এছাড়াও, অমর্ত্য সেন ভোটার তালিকার বিশেষ তীব্র সংস্কার (Special Intensive Revision – SIR) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সংবেদনশীলভাবে পরিচালনা না করলে এটি দরিদ্র ও সংখ্যালঘু মানুষের ভোটাধিকার剥ছিন্ন করতে পারে। সেন সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই। তাদের কাছে কঠোর কাগজপত্রের দাবি অযথা ন্যায়সঙ্গত নয়। একটির জন্য সাতটি নতুন ভুলকে যুক্তি করা যায় না।”

সেন এই মন্তব্যগুলি ‘India’s Youth: Social Opportunities They Should Have’ শীর্ষক জনসভায় উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপের সময় করেন। তিনি বলেন, দেশকে সক্রিয় সামাজিক সহযোগিতার দিকে এগোতে হবে, যা তিনি ‘yukta sadhana’ বা ‘সম্মিলিত চর্চা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ককে শুধুমাত্র সহিষ্ণুতার বিষয় হিসেবে না দেখে সহযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার গুরুত্বও উল্লেখ করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠপুত্র দারা শিকোহের কাজের কথা বলেন, যিনি পঞ্চাশটি উপনিষদকে সংস্কৃত থেকে পার্সিয়ানে অনুবাদ করেছিলেন। এই উদ্যোগ হিন্দু দর্শনের বৈশ্বিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সেনের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিনি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সংবেদনশীলতা, নাগরিক অধিকার এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সম্মান রক্ষায় গভীর মনোযোগ দিচ্ছেন।