Home Third Lead চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ভোট কার ঘরে? অর্থনৈতিক এজেন্ডায় ফোকাস

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ভোট কার ঘরে? অর্থনৈতিক এজেন্ডায় ফোকাস

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজ, বিশেষ করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা, তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে এই বৃহৎ অংশটির ভোট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাদের দাবি-দাওয়াগুলোও জাতীয় নীতি নির্ধারণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। স্থিতিশীল অর্থনীতি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং সহজ ব্যবসার সুযোগ – এই বিষয়গুলোই মূলত ব্যবসায়ীদের ভোট হিসাবের প্রধান নিয়ামক।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মূল দাবি-দাওয়া:

চট্টগ্রাম যেহেতু দেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং সমুদ্রবন্দরের শহর, এখানকার ব্যবসায়ীদের কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া রয়েছে যা জাতীয় পর্যায়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

১. বন্দর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি: দেশের অর্থনীতির ৮০-৮৫% বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই সম্পন্ন হয়। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিকীকরণ, কন্টেইনার জট কমানো, দ্রুত পণ্য খালাস এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে এবং উৎপাদন খরচ কমবে।

২. নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ: শিল্প উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ অপরিহার্য। ঘন ঘন লোডশেডিং এবং গ্যাসের স্বল্পতা উৎপাদন ব্যাহত করে, যা রপ্তানি আদেশ পূরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশা করেন।

৩. অবকাঠামোগত উন্নয়ন: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ণাঙ্গ ৪-লেন/৬-লেনে উন্নীতকরণ, রেলওয়ের আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নতি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এছাড়া, কর্ণফুলী টানেল, বে-টার্মিনাল এবং ইকোনমিক জোনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. কর নীতি ও শুল্ক ব্যবস্থায় সংস্কার: ব্যবসায়ীরা একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ এবং বিনিয়োগবান্ধব কর ও শুল্ক নীতি চান। তারা ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা, অযৌক্তিক কর ও শুল্ক আরোপ থেকে মুক্তি এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশের দাবি করেন। কর্পোরেট কর কমানো এবং নতুন বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের বিষয়টিও তাদের প্রত্যাশার অংশ।

৫. ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সহজ অর্থায়ন: উচ্চ সুদের হার, তারল্য সংকট এবং ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বড় বাধা। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা, সুদের হার কমানো এবং এসএমই খাতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানান। খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করাও তাদের প্রত্যাশা।

৬. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি: ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অপরিহার্য। চাঁদাবাজি, হয়রানি এবং নিরাপত্তার অভাব বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেয়। ব্যবসায়ীরা একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রত্যাশা করেন।

ব্যবসায়ীদের ভোট হিসাব:

ব্যবসায়ী সমাজ সাধারণত এমন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে, যারা তাদের উল্লিখিত দাবি-দাওয়াগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ক্ষমতায় এসে সেগুলো বাস্তবায়ন করে। তারা মূলত স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিকে প্রাধান্য দেয়।

স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ: ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতা পছন্দ করেন না। হরতাল, অবরোধ বা যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই তারা এমন সরকারকে সমর্থন করেন যারা একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা: চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে যেসব মেগা প্রকল্প চলমান, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

নীতিগত সমর্থন: ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরে। যেসব দল বা প্রার্থী এই দাবি-দাওয়াগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে, তাদের প্রতি ব্যবসায়ীদের সমর্থন বাড়ে।

স্থানীয় প্রভাব: চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বিজিএমইএ (চট্টগ্রাম), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা তাদের সদস্যদের প্রভাবিত করতে পারেন। তাদের সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় ভোটের গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক হয়।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের মন জয় করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নামে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন, কোন দল তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশি আন্তরিক। তাদের ভোট শুধু একজন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করে না, বরং জাতীয় অর্থনীতির গতিপথকেও প্রভাবিত করে। যে দল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা অর্জন করতে পারে, জাতীয় পর্যায়েও তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com