Home আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযান: ইতিহাস গড়ল অ্যাক্সিয়ম মিশন-৪

বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযান: ইতিহাস গড়ল অ্যাক্সিয়ম মিশন-৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্তে পা দিল বিশ্ব। বুধবার (২৬ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৩১ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড ৩৯এ থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান। এতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির চারজন বেসরকারি নভোচারী।

অ্যাক্সিয়ম মিশন-৪ নামের এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞ মার্কিন নভোচারী পেগি হুইটসন, যিনি বর্তমানে অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশ উড্ডয়ন পরিচালক। এই মিশনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) থেকে আসা শোভাংশু শুক্লা, যিনি হচ্ছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) প্রথম ভারতীয় বেসরকারি নভোচারী।

তাদের সঙ্গে রয়েছেন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পোলিশ প্রকল্প নভোচারী স্লাভোস উজনানস্কি-ভিশনেভস্কি এবং হাঙ্গেরির ‘হুনর’ (Hungarian to Orbit) কর্মসূচির আওতায় মহাকাশযাত্রী টিবর কাপু।

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রো বলেন, “স্পেসএক্স ও অ্যাক্সিয়ম স্পেসের সফল উৎক্ষেপণের জন্য অভিনন্দন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের পথ খুলে দিয়েছে। আজকের এই মিশন তারই ফল। প্রায় চার দশক পর ভারত, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির নভোচারীরা আবার মহাকাশে ফিরলেন।”

এই মিশন সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে হওয়া একটি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে। এতে ইসরো ও নাসা যৌথভাবে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং দুটি মহাকাশভিত্তিক শিক্ষা-প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে।

স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানটি নির্ধারিত সময়ের আগেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) আইএসএস-এর হারমনি মডিউলের ‘স্পেস-ফেসিং’ বন্দরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডক করতে পারে এটি।

অভ্যন্তরীণ ক্রু হিসেবে ইতিমধ্যে আইএসএসে রয়েছেন নাসার তিন নভোচারী নিকোল আয়ার্স, অ্যান ম্যাকক্লেইন ও জনি কিম; জাপানের তাকুয়া অনিশি এবং রাশিয়ার তিন নভোচারী কিরিল পেসকভ, সের্গেই রিজিকভ ও আলেক্সেই জুব্রিটস্কি। তাঁরা নতুন অতিথিদের স্বাগত জানাবেন।

মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকালে চার নভোচারী মাইক্রোগ্র্যাভিটি গবেষণা, শিক্ষা কার্যক্রম ও বাণিজ্যিক প্রকল্পে অংশ নেবেন। প্রায় দুই সপ্তাহ পর তাঁদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে। স্প্ল্যাশডাউন হবে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে।

নাসা জানিয়েছে, এই ধরনের মিশনের মাধ্যমে তারা পৃথিবীর কক্ষপথে শক্তিশালী বাণিজ্যিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়, যাতে ভবিষ্যতে সরকার নিজস্ব পরিসেবা না চালিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে সেবা কিনে নিতে পারে। এতে খরচ কমবে, উদ্ভাবন বাড়বে এবং নাসা মনোযোগ দিতে পারবে আর্টেমিস চন্দ্র মিশন ও মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতিতে।

‘মহাকাশ থেকে নমস্কার… আপনিও এই যাত্রা উপভোগ করুন’, ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) দিকে রওনা হয়ে মহাকাশযাত্রার মাঝপথ থেকে এই বার্তা পাঠিয়েছেন। শুভাংশু যুক্ত হয়েছেন Axiom-4 মিশনের সঙ্গে, যা Axiom Space এবং SpaceX-এর একটি যৌথ উদ্যোগ। মিশনে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মার্কিন কমান্ডার পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লাভোজ উজানস্কি-উইশনিউস্কি, এবং হাঙ্গেরির টিবোর কাপু।

উৎক্ষেপণের অভিজ্ঞতা: ‘তিরঙ্গা যেন কথা বলছিল’
শুভাংশু তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি গর্ব অনুভব করছি। আমার কাঁধে থাকা তিরঙ্গা যেন বলছিল, গোটা দেশ আমার সঙ্গে আছে। এটা শুধু আমার যাত্রা নয়, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিরও নতুন সূচনাও।’

তিনি জানান, উৎক্ষেপণের ১০ মিনিট পর যখন ড্রাগন ক্যাপসুল রকেট থেকে আলাদা হয়, তিনি জানালা দিয়ে সূর্যের উজ্জ্বল আলো এবং অসংখ্য তারা দেখতে পান। তাঁর কথায়, ‘এটা যেন এক চিত্রশিল্পীর আঁকা নীল-সবুজ ক্যানভাস।’

🌍 মহাকাশ অভিযানের এমনই আরও খবর পেতে আমাদের ফলো করুন
📢 এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন, আপনার মতামত দিন কমেন্টে