Home Second Lead অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক দেশজুড়ে, রংপুরে শতাধিক গরুর প্রাণহানি

অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক দেশজুড়ে, রংপুরে শতাধিক গরুর প্রাণহানি

ছবি: এ আই

আক্রান্ত মানুষও অর্ধশতাধিক, সংক্রমণ ঠেকাতে জরুরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু

নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। গত দুই মাসে রংপুর অঞ্চলে শতাধিক গরু মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। শুধু রংপুর নয়, মেহেরপুর, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়াতেও অ্যানথ্রাক্সের ছোঁয়া পাওয়া গেছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে।

রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় আক্রান্তদের অনেকেই পশু জবাই, মাংস বিক্রি ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পীরগাছায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

কী এই অ্যানথ্রাক্স

অ্যানথ্রাক্স হলো Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি সংক্রামক রোগ, যা মূলত গবাদিপশুর মাধ্যমে ছড়ায়। এই জীবাণু মাটিতে বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে। গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষে সংক্রমণ ঘটলে তা মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষত আক্রান্ত পশুর মাংস, রক্ত বা চামড়ার সংস্পর্শে এলে।

মানুষে অ্যানথ্রাক্সের তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে—
১. ত্বকজনিত (Cutaneous): সংক্রমিত পশুর চামড়া বা রক্তের সংস্পর্শে এলে ত্বকে ঘা হয়।
২. শ্বাসনালীজনিত (Inhalation): বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে গুরুতর শ্বাসকষ্ট হয়।
৩. পরিপাকতন্ত্রজনিত (Gastrointestinal): অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খেলে হয়।

কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে

পশু জবাইকারী, কসাইখানার কর্মী, চামড়াশিল্পের শ্রমিক, কৃষক ও পশুপালকেরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। আক্রান্ত পশু জবাই করা বা সংক্রমিত মাংস প্রক্রিয়াজাত করার সময় রোগটি সহজেই ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় জরুরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুর দেহ পুড়িয়ে বা গভীর মাটিচাপা দিয়ে ফেলা এবং সংক্রমিত এলাকার পশু পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। তাই আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞের মত

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “অসচেতনতা ও গবাদিপশুর টিকা না দেওয়াই সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। আমরা এখন আক্রান্ত এলাকায় গবাদিপশুর জরুরি টিকাদান ও জনসচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছি।”

অ্যানথ্রাক্স এখন শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং এটি প্রাণিসম্পদ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সময়মতো টিকাদান, আক্রান্ত পশু সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।