আকাশের পথে চট্টগ্রাম
কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক হৃদপিণ্ড হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদ। এই এলাকাটি সব সময়ই ব্যস্ত থাকে শিপিং ব্যবসায়ীদের কর্মতৎপরতা আর ব্যাংকিং খাতের শোরগোলে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই ব্যস্ততার মাঝে নতুন এক আভিজাত্য যোগ করেছে ‘আজিজ কোর্ট ইম্পেরিয়াল’। ৩২ তলার এই সুউচ্চ ভবনটি বর্তমানে চট্টগ্রামের আকাশছোঁয়া ভবনগুলোর তালিকার শীর্ষে । ১২৮ মিটার উচ্চতার এই স্থাপত্যশৈলী যেন চট্টগ্রামের আধুনিকায়নের এক জীবন্ত প্রতীক।
আজিজ কোর্ট ইম্পেরিয়াল শুধু উচ্চতার জন্যই নয়, বরং এর আধুনিক নির্মাণশৈলীর জন্যও নজর কাড়ছে স্থপতি ও সাধারণ মানুষের। ভবনটির বাইরের কাঁচের আবরণ সূর্যের আলোয় যেমন ঝিলমিল করে, তেমনি রাতে এর আলোকসজ্জা আগ্রাবাদের আকাশকে করে তোলে মায়াবী।
অত্যাধুনিক লিফট ব্যবস্থা, সুপরিসর পার্কিং এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা এই ভবনটিকে আন্তর্জাতিক মানের কর্পোরেট হাব-এ পরিণত করেছে।
কর্পোরেট কর্মকর্তা সানজিদা রহমান (৩৪)বললেন, “আগে আমাদের কোনো বিদেশি ক্লায়েন্ট আসলে আগ্রাবাদে ভালো মানের অফিস স্পেস দেখাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন আজিজ কোর্ট ইম্পেরিয়াল হওয়ার পর আমরা গর্ব করে বলতে পারি যে আমাদেরও বিশ্বমানের বিজনেস টাওয়ার আছে। এটা কেবল একটা ভবন নয়, এটা আমাদের পেশাদারিত্বের প্রতীক।”
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জহিরুল হক বললেন, “উন্নয়ন বলতে আমরা যা বুঝি, আজিজ কোর্ট যেন তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ। তবে আমার ইচ্ছা আছে একদিন এই ভবনের একদম উপরে উঠে পুরো চট্টগ্রাম শহরটাকে দেখার। ওপর থেকে সমুদ্র আর পাহাড়টা কেমন দেখায়, তা দেখার খুব শখ।”
ভবনটির ৩২ তলার চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হয় মেঘের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন আপনি। সেখান থেকে একদিকে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি আর কর্ণফুলী নদীর মোহনা, যেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শত শত মালবাহী জাহাজ।
অন্যদিকে, পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রামের সবুজ আর নগরের যান্ত্রিকতার এক অদ্ভুত মেলবন্ধন চোখে পড়ে। চট্টগ্রামের আর কোনো স্থান থেকে বাণিজ্যিক রাজধানীর এই ‘বার্ডস আই ভিউ’ বা পাখির চোখে দেখার সুযোগ মেলা ভার।
এক সময় বাণিজ্যিক এলাকা বলতে মানুষ কেবল নিচু দালান বা ঘিঞ্জি অফিস বুঝত। কিন্তু আজিজ কোর্ট ইম্পেরিয়াল সেই ধারণা বদলে দিয়েছে। বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং দেশীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এই ভবনের দিকে ঝুঁকছে। এটি কেবল একটি ভবন নয়, বরং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি মাইলফলক। যারা চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের কাছে এই ভবনটি এখন আস্থার প্রতীক।
চট্টগ্রামের নগরায়ন যে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে, আজিজ কোর্ট তার প্রমাণ। স্থপতিদের মতে, এই ধরনের সুউচ্চ ভবন নির্মাণের ফলে ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে এবং চট্টগ্রামের স্কাইলাইন বিশ্বমানের হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আজিজ কোর্ট ইম্পেরিয়াল এখন চট্টগ্রামের গর্ব। এটি জানান দিচ্ছে যে, বন্দরনগরী এখন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আগ্রাবাদের এই আকাশচুম্বী স্থাপত্য কেবল ইটের দেয়াল আর কাঁচের কাঠামো নয়; এটি চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং আগামীর আধুনিক বাংলাদেশের এক নতুন মানচিত্র।









