Home শিক্ষা রাবি শিক্ষকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছাত্রী, চাঁদাবাজির অভিযোগ

রাবি শিক্ষকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছাত্রী, চাঁদাবাজির অভিযোগ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর কক্ষে এক ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই ঘটনা চাপা দিতে ছাত্র ও সাংবাদিক পরিচয়ে চারজন শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হেদায়েত উল্লাহর কক্ষে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে ছাত্রীকে আটক করেন অভিযুক্তরা। ১৪ মে ওই ঘটনার একটি ৭ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টির নিন্দা জানিয়ে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন এবং দুজনের শাস্তির দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিভাগের একাডেমিক কমিটি তদন্ত চলাকালে ওই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

 ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী পক্ষ। যদিও অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে সন্ধ্যায় শিক্ষকের সঙ্গে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই অভিযুক্তরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ © সংগৃহীত

রবিবার  নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে  অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ অভিযোগ করেছেন, তাঁকে জিম্মি করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল এবং তিনি ইতোমধ্যে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, ১১ মে সন্ধ্যায় ২০১৮-১৯ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী পড়াশোনার বিষয়ে কথা বলতে তাঁর চেম্বারে গেলে, হঠাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব তাহমিদ, সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম সুমন ও সাজ্জাদ হোসেন সজীব চেম্বারে ঢুকে তাঁকে ও ছাত্রীকে জিম্মি করেন।

তাঁর অভিযোগ, অভিযুক্তরা দাবি করেন ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ রয়েছে এবং চেম্বারে অবস্থানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। হেদায়েত উল্লাহ জানান, প্রথম দিনে এক লাখ এবং পরদিন আরও দুই লাখ টাকা দেন তিনি।

তিনি দাবি করেন, ভিডিওটিতে কোনো আপত্তিকর দৃশ্য না থাকলেও ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তাঁর সম্মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে।

অন্যদিকে এ ঘটনায় আলোচিত ছাত্রী একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরের (এমবিএ) শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকের সঙ্গে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে বিভাগে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে বিভাগে দ্বিতীয় হওয়ার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব, রাবিসাসের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইবিএ’র শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব। আতাউল্লাহ ও সাকিব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আতাউল্লাহকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ছাত্রীটির অভিযোগ, “স্যারের ব্যস্ততার কারণে বিকেলে তার কক্ষে পড়তে গেলে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তখন কিছু শিক্ষার্থী হঠাৎ প্রবেশ করে ওড়না টেনে ফেলে এবং ধর্ষণের হুমকি দেয়। তারা প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরে স্যারের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে চেম্বার ত্যাগ করে, এরপর এক লাখ এবং পরদিন আরও দুই লাখ টাকা নেয়।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত সাংবাদিকরা বলেন, “আমরা কাউকে ছুঁইনি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ তোলা হয়েছে। কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।”

তবে ওইদিন বিকেলে অভিযুক্তদের একজন নাজমুস সাকিবের সঙ্গে শিক্ষকের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে শিক্ষক টাকা দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানান এবং বলেন, “আপনারা তো টাকা নিবেন আমার কাছ থেকে, ৪ জন থাকা ভালো না? পরে যদি অন্যরা বলে সাকিব আমাদের টাকা দেয়নি, তখন আমি কী করব?”

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”