Home আন্তর্জাতিক ইউকের নতুন ইমিগ্রেশন নীতি: বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন সময়

ইউকের নতুন ইমিগ্রেশন নীতি: বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন সময়

আজহার মুনিম, লন্ডন থেকে: যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি যেসব কঠোর ইমিগ্রেশন আইন কার্যকর করেছে, তা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে অভিবাসনের ধারাকে এক বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো মধ্য আয়ের দেশ থেকে যারা যুক্তরাজ্যে কাজ, শিক্ষা বা পারিবারিক পুনর্মিলনের আশায় পাড়ি জমাতে চায়, তাদের জন্য এই নতুন নিয়ম যেন এক অনিশ্চয়তার দেয়াল।

নতুন নীতির মূল বৈশিষ্ট্য

২০২৪ সালের শেষ প্রান্ত থেকে কার্যকর হওয়া নিয়মগুলোর মধ্যে প্রধানত তিনটি দিক সবচেয়ে প্রভাব ফেলছে:

১. সর্বনিম্ন বেতনের সীমা বাড়ানো – স্পন্সর ভিসায় আসা কর্মীদের জন্য সর্বনিম্ন বাৎসরিক বেতনসীমা ২৬,২০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩৮,৭০০ পাউন্ড করা হয়েছে।

২. সঙ্গীর জন্য আনয়নের শর্ত – ব্রিটিশ নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কারও যদি বিদেশি জীবনসঙ্গীকে যুক্তরাজ্যে আনতে চান, তবে তাঁর বাৎসরিক আয় হতে হবে ন্যূনতম ৩৮,৭০০ পাউন্ড। আগে এটি ছিল মাত্র ১৮,৬০০ পাউন্ড।

৩. স্বাস্থ্য ও কেয়ার সেক্টরে নিয়োগে কড়াকড়ি – শুধু কেয়ার হোমস নয়, এখন হাসপাতালেও বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে বাড়তি যাচাই আরোপ করা হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসার সুযোগও বন্ধ।

বাংলাদেশিদের বাস্তবতা

যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের একটি বড় অংশ কেয়ার, খাদ্য, পরিবহন ও খুচরা খাতে কর্মরত। নতুন বেতনসীমা ও ভিসা স্পন্সরের শর্ত কঠিন হওয়ায় এই খাতগুলোতে নতুন করে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যারা লোন নিয়ে বা জমি বিক্রি করে ইউকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি একপ্রকার স্বপ্নভঙ্গ।

একইসঙ্গে, যারা ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং বিদেশ থেকে জীবনসঙ্গী বা সন্তান আনতে চাইছেন, তাদের মধ্যেও গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে। কারণ নতুন নিয়মে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ বাংলাদেশিই আয়সীমা পূরণ করতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের জন্যও অনিশ্চয়তা

২০২৪ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে আরও কঠোর ভিসা নীতি চালু করা হয়, যার ফলে:

  • কোর্স শেষ হওয়ার আগেই পারিবারিক ভিসা আবেদন নিষিদ্ধ।
  • পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার শর্তও পর্যালোচনার আওতায়।
  • বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আগে যুক্তরাজ্যকে নিরাপদ ও কর্মমুখী উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে দেখলেও এখন এই ধারা ধাক্কা
    খেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, ইউকের এই কড়া অবস্থান মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে নেওয়া। তবে এতে দক্ষ শ্রমিকদের অভাব আরও প্রকট হবে, বিশেষ করে হেলথ কেয়ার ও রিটেইল খাতে। ফলে ইউকে সরকার হয়তো আবার শর্ত শিথিল করতে বাধ্য হবে।

বাংলাদেশ সরকার এবং লন্ডনস্থ হাইকমিশনেরও উচিত হবে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা, যাতে ভবিষ্যতে অন্তত বাংলাদেশের জন্য কিছু ছাড় বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সুযোগ তৈরি হয়।