আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মাত্র ১৬ বছর বয়সে অকালে ঝরে গেল এক মেধাবী কিশোরী। মালয়েশিয়ার এসএমকে বান্দার উতামা ৪ নামের একটি স্কুলে ঘটে গেল বিভীষিকাময় এক হত্যাকাণ্ড, যেখানে এক ছাত্র তার সহপাঠীকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। নিহত শিক্ষার্থী ইয়াপ শিং জুয়েনকে ২০০ বার ছুরিকাঘাত করা হয় বলে জানিয়েছেন তার মা উং লি পিং।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) কুয়ালালামপুরের নির্ভানা সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শোকে ভেঙে পড়া মা বলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে আমার মেয়েকে ৫০ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা ২০০ বার। গলা থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্ত, এমনকি পায়েও।”
তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে স্কুলের বাথরুমে তার মেয়েকে আক্রমণ করে ১৪ বছর বয়সী এক সহপাঠী।
“পুলিশ জানিয়েছে, ছেলেটি বাথরুমের দরজা বন্ধ দেখে উপরের দিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মেয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছিল, সবাই শুনেছিল। কিন্তু যখন শিক্ষকরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন, তখন সে আর বেঁচে ছিল না,” বলেন উং লি পিং।
তিনি অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়ে ইতিমধ্যে একজন ভিকটিম। দয়া করে তার মৃত্যু নিয়ে ভুয়া গল্প ছড়াবেন না। সে ছেলেটিকে চিনত না, তার সঙ্গে কোনো সম্পর্কও ছিল না।”
শিং জুয়েন সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে ছিল বুদ্ধিমতী, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আদুরে। মৃত্যুর দুদিন আগে আইএস কেএল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। সে কখনো আমাদের চিন্তায় ফেলেনি। সবসময় যত্নবান, সংগঠিত ও স্নেহশীল ছিল।”
তিনি আরও সতর্ক করেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি কিউআর কোড ব্যবহার করে ভুয়া তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
“দয়া করে ওইসব লিঙ্কে অর্থ পাঠাবেন না। যদি সত্যিই শ্রদ্ধা জানাতে চান, তবে এখানে এসে আমার মেয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।”
উং লি পিং জানান, অনলাইনে মিথ্যা দাবি ছড়ানো হয়েছে যে, তার ভাই অপরাধীর আত্মীয়।
“আমার ভাই উং ইউন লিম আমাকে মেয়ের মরদেহ নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কিছু ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, সে নাকি হত্যাকারীর বাবা। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এ বিষয়ে সে পুলিশে অভিযোগ দিয়েছে।”
নিহত কিশোরীর সৎপিতা হাও বুন চিন (৬০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে কথা বলছে। দয়া করে এটা বন্ধ করুন। এমন ভয়াবহ ঘটনার পরেও কেউ কেউ মিথ্যা গল্প ছড়াচ্ছে। এতে শুধু কষ্ট বাড়ছে। এখন অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।”
তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রাখেন, “মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একটি ধারালো অস্ত্র স্কুলে ঢুকল? এটা নিয়ে কঠোর তদন্ত হওয়া উচিত।”
পুলিশ ইতোমধ্যেই ১৪ বছর বয়সী ওই সন্দেহভাজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে এবং তাকে সাত দিনের রিমান্ডে রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী ফাদলিনা সিদেক ও তার উপমন্ত্রী উং কাহ উও নিহত শিক্ষার্থীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মন্ত্রীরা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং এই কঠিন সময়ে দৃঢ় থাকার আহ্বান জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগ উপমন্ত্রী তেও নি চিং, সংসদ সদস্য লিম গুয়ান ইং, ইয়ো বি ইন, তেরেসা কক ও লিম লিপ ইং।
নিহত শিং জুয়েনের মরদেহ নির্ভানা সেন্টার কুয়ালালামপুরের তৃতীয় তলার ইম্পেরিয়াল মেমোরিয়াল হলে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) থেকে পাঁচ দিন রাখা হবে, যাতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও সহপাঠীরা এসে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।










