Home সারাদেশ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: পল্লীর চায়ের দোকানে রাতের আড্ডা এখন যুদ্ধের খবরে উত্তাল”

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: পল্লীর চায়ের দোকানে রাতের আড্ডা এখন যুদ্ধের খবরে উত্তাল”

ছবি এ আই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, আনোয়ারা ( চট্টগ্রাম): সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জুঁইদন্ডির মেঠোপথগুলো যখন ধীরে ধীরে নীরব হয়ে আসে, তখন জমে ওঠে পাড়ার পুরনো সেই চায়ের দোকান। একদিকে চায়ের কাপের ধোঁয়া, অন্যদিকে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা যুদ্ধের ছবি, ইরান-ইসরায়েলের টানটান উত্তেজনার আঁচ লেগেছে এই দূরের পল্লী গ্রামেও।

এই জুঁইদন্ডি গ্রামের চায়ের দোকানটি যেন হয়ে উঠেছে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ কেন্দ্র’। কৃষক থেকে শুরু করে কলেজপড়ুয়া তরুণ, ব্যবসায়ী, দিনমজুর কিংবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, সবাই মুগ্ধ নয়নে শুনছেন, দেখছেন এবং নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করছেন সেই যুদ্ধে কে এগিয়ে, কে পিছু হটেছে, কে কী বলেছে।

চা, খবর আর উদ্বেগ:

মো. দেলোয়ার হোসেন নামে ষাটোর্ধ এক কৃষক বললেন, “ভাই, যুদ্ধ তো ওদের, কিন্তু তার রেশ তো আমাদের গায়েও পড়ে। তেলের দাম বাড়লে সারে, যন্ত্রে, বাজারে সবকিছুর খরচ বাড়বে।”
তাঁর পাশে বসে থাকা রিকশাচালক মনু মিয়া মাথা নাড়লেন,
“ইসরায়েল তো শক্তি বড়। কিন্তু ইরানও কম না। এখন শুনি হিজবুল্লাহও মাঠে নেমেছে।”

চায়ের দোকানের মালিক  আলম টিভি চালিয়ে রেখেছেন পুরোটা সন্ধ্যা ধরে। দেশি এক টেলিভিশন চ্যানেলে খবর চলছিল, তাতে স্পষ্ট দেখানো হচ্ছিল ইসরায়েলের বিমান হামলা, ইরানের পাল্টা ড্রোন হামলা। তিনি বললেন,
“আগে মানুষ ক্রিকেট বা রাজনীতি নিয়ে কথা বলত, এখন সবাই জিজ্ঞেস করে আজকে যুদ্ধের কী খবর?”

তরুণদের মধ্যে কৌতূহল ও বিশ্লেষণ:

আনোয়ারা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাসেল জানায়, “ইসরায়েল আগেও হামলা করেছে, কিন্তু এবার ইরানও মুখ বন্ধ রাখে নাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখি, হায় রে! মনে হয় গেম খেলতেছি।”

স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন বলল, “এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের না, এটা মুসলিমদের আত্মমর্যাদার লড়াই। ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর যত জুলুম, এখন তা নিয়ে কথা বলার সময়।”

তবে শুধু উত্তেজনা নয়, এই যুদ্ধ নিয়ে দুশ্চিন্তাও আছে গ্রামের মানুষের মধ্যে। গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, “তেলের দাম বাড়লে চাল, ডাল, নুন সবই চড়া হবে। যুদ্ধ তো দূরে, কিন্তু ভোগান্তি আমাদের ঘরেই এসে পড়ে।”

গ্রামের মসজিদে আলোচনা:

জুমার নামাজ শেষে গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদে ইমাম হাফেজ সাইফুল্লাহ খান খুতবার একাংশে বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আমরা প্রার্থনা করি যেন নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ হয় এবং আল্লাহর হুকুমেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।”

তারপরও মসজিদ থেকে বেরিয়ে অনেকেই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন করলেন ইরান যদি সরাসরি লড়াইয়ে নামে, তাহলে আরব বিশ্ব কী করবে?

গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সবখানে আলোচনার ঝড়:

বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে গ্রামের স্কুল শিক্ষক ফারুক স্যার বলেন,
“এই ধরনের ঘটনা বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ বদলে দিতে পারে। মিডল ইস্টের এই আগুন ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব অর্থনীতি, অভিবাসন, এমনকি বাংলাদেশেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।”

 গ্রামের কিশোরেরা মাঠে ফুটবল খেলার ফাঁকে বলছে, “এই যুদ্ধ অনেক দিন চলবে। তেল গ্যাস সবকিছুর দাম বাড়বে, আমরাও ভুগব।”

তাদের এই ভুগতে হবে—এই উপলব্ধিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গ্রামের প্রত্যন্ত প্রান্তেও ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এখন বাস্তব এক আশঙ্কা, একটা উদ্বেগ, একটা প্রতীক্ষা ‘আর কী হতে যাচ্ছে?’