Home First Lead ঈদ বাজারে রেমিট্যান্স ও বোনাসে নগদের জোয়ার

ঈদ বাজারে রেমিট্যান্স ও বোনাসে নগদের জোয়ার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশজুড়ে ৭ জুন উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা, মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল মন্দার ছায়ায়, কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলে একধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সরকারি চাকরিজীবীরা বোনাস পেয়েছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও দিয়েছে উৎসব ভাতা। তৈরি পোশাক শিল্পে বেড়েছে উৎপাদন, বাড়ছে রেমিট্যান্স, আর কুরবানির পশু কেনাবেচা তো আছেই। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সবমিলিয়ে এবার ঈদ অর্থনীতি ছাড়াতে পারে এক লাখ কোটি টাকা।

গ্রামের হাট-বাজারে আবার প্রাণ:

ঈদকে ঘিরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পশু বিক্রেতা, কামারশিল্পী, মসলার দোকানদার, পোশাক ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক থেকে শুরু করে ছোট দোকানদাররাও আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। উত্তরাঞ্চলের নাটোর, বগুড়া, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ অনেক জেলা থেকে ঢাকায় আসছে কুরবানির পশু। স্থানীয় হাটগুলোতেও ক্রেতার ভিড় বাড়ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ, বিপরীতে দেশেই প্রস্তুত আছে ১ কোটি ২৪ লাখ পশু। ফলে এই খাতেই আনুমানিক ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হবে, যার মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের সম্ভাবনা আছে।

ঈদ বোনাস ও রেমিট্যান্সে নগদ অর্থের প্রবাহ:

সরকারি-বেসরকারি মিলে ২০ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, তৈরি পোশাক খাতে ৭০ লাখের বেশি শ্রমিক ও দোকান কর্মচারীরা ঈদের বোনাস পেয়েছেন। একাধিক গবেষণা বলছে, এই উৎসব ঘিরে বোনাস বাবদ অর্থনীতিতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার যোগান আসছে।

অন্যদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ২৪ মে পর্যন্ত দেশে এসেছে ২২৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকারদের মতে, ঈদ পর্যন্ত এই পরিমাণ ২৭৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মসলা, চামড়া ও কামারশিল্পের দাপট:

ঈদুল আজহার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রান্নাবান্নার উপকরণ। দেশে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গরম মসলা—সব কিছুর চাহিদা এই সময় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কেবল মসলার বাজারেই এবার ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, কুরবানির পশুর চামড়া অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বার্ষিক চামড়ার ৬০-৭০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় কেবল এই সময়। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, এই খাতের সরাসরি বাজার ৪-৫ হাজার কোটি টাকা হলেও পরোক্ষভাবে তা ১০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়।

ঈদ মানেই গ্রামীণ অর্থনীতির উৎসব:

এই উৎসব শহরের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে গ্রামে। কারণ গ্রামীণ পরিবারগুলো ঈদকে ঘিরে বছরজুড়ে সঞ্চয় করে। মসজিদ, মাদরাসা, দরিদ্রদের মাঝে কুরবানির গোশত বিতরণের মাধ্যমে অর্থনীতির নিচুতলার মানুষও লাভবান হয়। কামারশিল্প, গবাদিপশু পরিবহণ, সেলাইয়ের কাজ, ঈদের কাপড় তৈরি থেকে শুরু করে হাজারো খাত এই সময় সরাসরি লাভবান হয়।

মূল্যস্ফীতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ:

অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “উৎসব ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে, সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ে। তবে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ সমন্বয় না হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।” তিনি পরামর্শ দেন, এই সময় বাজার তদারকিতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

ঈদের অর্থনীতি: একটি চিত্র:

পশু বিক্রি: ৬৭ হাজার কোটি টাকা

রেমিট্যান্স: ২৭-৩০ হাজার কোটি টাকা

মসলা, রান্নার উপকরণ: ১০ হাজার কোটি টাকা

চামড়া খাত: ১০ হাজার কোটি টাকা

কামার শিল্প: ১ হাজার কোটি টাকা

পরিবহণ ও ভ্রমণ: ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

সবমিলিয়ে এবারের কুরবানির ঈদ দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে। একদিকে প্রবাহিত হচ্ছে বিপুল নগদ অর্থ, অন্যদিকে বাড়ছে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন। ঈদের এই সক্রিয় অর্থনৈতিক প্রবাহ যদি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তবে সেটি শুধু উৎসবের নয় অর্থনীতির জন্যও হতে পারে আশার আলো।

এই ঈদে আপনার এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা বাড়ছে তা জানাতে আমাদের ফেসবুক পাতায় কমেন্ট করুন বা ইনবক্সে লিখে পাঠান। আরও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন পড়তে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম-এ।
📌 নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের পেজে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি।