Home আন্তর্জাতিক তিন হাজার রোগী দিনে, ভুলভ্রান্তি নেই-এটাই ভবিষ্যতের চিকিৎসা?

তিন হাজার রোগী দিনে, ভুলভ্রান্তি নেই-এটাই ভবিষ্যতের চিকিৎসা?

ছবি সংগৃহীত

হেলথ ডেস্ক:
বিশ্বে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত একটি হাসপাতালের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে চীন। এই অভিনব উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এজেন্ট হসপিটাল’ বা ‘প্রতিনিধি হাসপাতাল’।

চীনের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা হাসপাতালটি তৈরি করেছেন, যেখানে কোনও মানব ডাক্তার, নার্স বা কর্মী নেই। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটি চালাচ্ছে ১৪ জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভার্চুয়াল চিকিৎসক, যাঁরা বিভিন্ন চিকিৎসা শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালটি এখন পর্যন্ত পাঁচ লক্ষের বেশি চিকিৎসা কেসের তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত। এতে এমনকি জটিল ও বিরল রোগও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে অতি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে। দিনে অন্তত তিন হাজার রোগীকে এই ব্যবস্থা সেবা দিতে পারে। মানব চিকিৎসকদের মতো ভুলভ্রান্তি, সময়ক্ষেপণ কিংবা রোগ নির্ণয়ে দ্বিধার অবকাশ এখানে নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এই চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলে স্বাস্থ্যখাতে এক বিপ্লব ঘটতে চলেছে। উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র দেশগুলো, যারা চিকিৎসকের সংকট ও বাজেট ঘাটতির কারণে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তাদের জন্য এই প্রযুক্তি হতে পারে বড় সমাধান।

গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি সাধারণ ডাক্তার বছরের সর্বোচ্চ ২০-২৫ হাজার রোগী সেবা দিতে পারেন। সেখানে এই ‘এআই হাসপাতাল’ প্রতিদিন তিন হাজার রোগীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিকিৎসা দিতে পারছে। এর ফলে রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন থাকবে না, বরং মিলবে তাৎক্ষণিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও লক্ষ্য:

এই হাসপাতালের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—

উন্নয়নশীল দেশে রপ্তানি ও স্থাপন

যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সেনাদের দ্রুত চিকিৎসা

দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে কার্যকর হওয়া

দূরবর্তী বা দুর্গম অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষায় ব্যবহৃত হওয়া, যাতে ভবিষ্যতের চিকিৎসকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেন

সতর্কতাও থাকছে:

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। যেমন—মানবিক সহানুভূতি, নৈতিক জটিলতা, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, এবং যন্ত্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্কের যে মানবিক দিক, তা কি প্রযুক্তি ধরে রাখতে পারবে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হাসপাতাল ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থার এক অংশ হয়ে উঠবে ঠিকই, তবে পুরোপুরি মানব চিকিৎসকের বিকল্প হিসেবে নয় বরং একটি পরিপূরক শক্তি হিসেবেই দেখা উচিত।