Home শিক্ষা ২৫ বছর পর মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পাস: লালপুরে বাবা-সন্তানের প্রেরণাদায়ী গল্প

২৫ বছর পর মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পাস: লালপুরে বাবা-সন্তানের প্রেরণাদায়ী গল্প

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নাটোর: জীবনের বয়স পেরিয়েছে অনেকটা, কিন্তু শিক্ষার বয়স নয়—এ কথাটির জীবন্ত উদাহরণ এখন নাটোরের লালপুরের এক বাবা। এক যুগ নয়, দুই যুগেরও বেশি সময় পর ফের পরীক্ষার টেবিলে বসে তিনি প্রমাণ করেছেন—ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়।

লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন নিজের মেয়ের সঙ্গে একইসঙ্গে। ফলাফলে দেখা যায়, মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি নিজেই। হান্নান অর্জন করেছেন জিপিএ–৪.৩৩, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন পেয়েছেন জিপিএ–৩.৭১।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ফল প্রকাশের পরই গ্রামে শুরু হয় আলোড়ন। কেউ অবাক, কেউ আবার অনুপ্রাণিত। সবাই বলছেন, “শিক্ষার প্রতি এমন অদম্য আগ্রহ সত্যিই বিরল।”

হান্নানের গল্পও কম নাটকীয় নয়। ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর জীবনের ব্যস্ততায় শিক্ষা থেমে যায়। সংসার, সন্তান, জীবিকার টানাপোড়েন—সবকিছু সামলে তিনি একসময় ভুলে যান নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নের কথা। কিন্তু মন থেকে কখনও হারাননি শেখার আকাঙ্ক্ষা।

২৫ বছর পর, ২০২৩ সালে রুইগাড়ি হাই স্কুল থেকে তিনি পুনরায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেন—নিঃশব্দে, কাউকে কিছু না জানিয়ে। তখনও তাঁর সহপাঠী ছিলেন তাঁরই মেয়ে হালিমা। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই স্থানীয়ভাবে তিনি হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণার প্রতীক।

এবার সেই অনুপ্রেরণা আরও উজ্জ্বল হলো এইচএসসি ফলাফলের মাধ্যমে।
গ্রামের মানুষ বলছেন, “হান্নান শুধু নিজের মেয়েকেই নয়, পুরো প্রজন্মকেই শেখালেন—চেষ্টা করলে সব সম্ভব।”

বর্তমানে স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে সুখী পরিবার গড়ে তুলেছেন হান্নান। কিন্তু তাঁর চোখে এখনো ঝলমল করছে নতুন স্বপ্ন—“শিক্ষার শেষ নেই,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি, “আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই।”

এই একবাক্যেই যেন লুকিয়ে আছে শত তরুণের জন্য এক বার্তা—সময় যায়, কিন্তু ইচ্ছাশক্তি যদি টিকে থাকে, স্বপ্ন আবারও ডানা মেলে উড়তে পারে।