Home আন্তর্জাতিক মালয়েশিয়ায় এজেন্টিক এআইর পথে যাত্রা: কর্মক্ষেত্র বদলে দিচ্ছে স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তা

মালয়েশিয়ায় এজেন্টিক এআইর পথে যাত্রা: কর্মক্ষেত্র বদলে দিচ্ছে স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশে বিশ্বজুড়ে চলছে দ্রুত পরিবর্তন, আর এই পরিবর্তনের ঢেউ পৌঁছেছে মালয়েশিয়াতেও। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, কনটেন্ট তৈরির গণ্ডি পেরিয়ে এআই এখন প্রবেশ করছে ‘এজেন্টিক এআই’ যুগে, যেখানে এআই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হবে মানুষের সহায়তা ছাড়াই।

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া স্কুল অব বিজনেস-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মাঞ্জীভন সিংহ সীরা জানান, বর্তমানে ব্যবহৃত এআই মডেলগুলোতে মানুষের ইনপুট এবং তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। কিন্তু এজেন্টিক এআই-এর ক্ষেত্রে মডেল নিজেই দায়িত্ব নিতে পারবে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তি জগতে এখন নতুন মোহ হচ্ছে ‘এআই এজেন্ট’ বা এমন এক সহচর প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীর হয়ে কাজ সম্পন্ন করে। সেলসফোর্স ইতোমধ্যে ফেডএক্স এবং অ্যাকসেনচারের মতো ২০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে এআই এজেন্ট স্থাপনের চুক্তি করেছে।

একটি বীমা সংস্থা ৬০ শতাংশ গ্রাহক সেবা এখন পরিচালনা করছে এআই এজেন্টের মাধ্যমে, যার জন্য ৩০০ ঘণ্টার মানব কণ্ঠ প্রশিক্ষণ ব্যবহার করা হয়েছে। একইভাবে, ওপেনএআই তাদের ‘Deep Research’ নামের এজেন্টিক ফিচার চালু করেছে, যা একটি প্রম্পটের মাধ্যমে শত শত উৎস বিশ্লেষণ করে বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে।

চীনা প্রতিষ্ঠান ‘Butterfly Effect’ মার্চ মাসে ‘Manus’ নামে একটি এজেন্টিক এআই চালু করেছে, যা বাস্তব জীবনের নানা কাজ যেমন—৪০ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার পরিচালনা, বীমা নীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ ইত্যাদি দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারছে।

ড. মাঞ্জীভন বলেন, “ধরুন আপনি জাপান ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। আপনি এআইকে শুধুমাত্র কিছু নির্দেশনা দেবেন, আর সে আপনার জন্য সম্পূর্ণ ভ্রমণ পরিকল্পনা, ফ্লাইট, আবাসন এবং দর্শনীয় স্থানসহ তৈরি করে দেবে।”

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কর ফাইলিং-এর মতো জটিল কাজও পুরোপুরি পরিচালনা করতে পারবে এজেন্টিক এআই। ব্যবহারকারীর রশিদ, খরচ ও রাজস্ব বিশ্লেষণ করে এআই নিজেই কর ফর্ম পূরণ এবং জমা দিতে সক্ষম হবে। এই প্রক্রিয়ায় ভুল কমবে, সময় বাঁচবে।

তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ড. মাঞ্জীভন মনে করেন, “জনসচেতনতা, স্পষ্ট নীতিমালা ও বিশ্বস্ততা অর্জন জরুরি। ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা ও ই-কমার্সে এর সুফল বেশি দেখা যেতে পারে, তবে ভুল সিদ্ধান্ত বা অপব্যবহারের দায় কে নেবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”

তিনি জানান, মালয়েশিয়ার মতো বহুসাংস্কৃতিক সমাজে এআইকে অবশ্যই স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করতে হবে, না হলে কিছু গোষ্ঠী উপেক্ষিত হতে পারে।

প্রযুক্তির এ নবতর ঢেউয়ে মালয়েশিয়াকে নেতৃত্বে রাখতে হলে স্বচ্ছতা, স্বাধীন নিরীক্ষা এবং খোলামেলা ডিজাইন অপরিহার্য বলে মত দেন তিনি। জাতীয় এআই অফিস, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার আহ্বানও জানান ড. মাঞ্জীভন।