Home First Lead প্রমাণ হলো যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কোন বিশেষায়িত কাজ নয়, নতুন ব্যবস্থাপনায় এনসিটি...

প্রমাণ হলো যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কোন বিশেষায়িত কাজ নয়, নতুন ব্যবস্থাপনায় এনসিটি কার্যক্রম

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল ( এনসিটি )-এর কার্যক্রম পরিচালনার চুক্তি শেষ সাইফপাওয়ারটেকের সাথে। টানা ১৭ বছর এই টার্মিনালটি পরিচালনা পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিতে। শুরুতে উন্মুক্ত দরপত্রে, আর পরবর্তীতে ডিপিএম ( সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) এ। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রমাণ করেছে যে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম কোন বিশেষায়িত কাজ নয়, কোন অভিজ্ঞ কোম্পানি,  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা শ্রমিক সরবরাহ প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য নয় দক্ষতার সাথে তা সম্পন্ন করার জন্য।

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৩২ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। আর এর ৪৪ শতাংশ এককভাবে হ্যান্ডলিং হয়েছে এনসিটিতে। এনসিটির পাঁচটি বার্থ। সেখানে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে।  সক্ষমতা ১১ লাখ টিইইউস হলেও বর্তমানে হ্যান্ডলিং হচ্ছে ১৩ লাখ টিইইউস। এখান থেকে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চিটাগাং চেম্বারের একজন সাবেক পরিচালক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি বিজনেসটুডে২৪ কে সাইফপাওয়ারটেক লিমিটেডের চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসার সূচনা ও পরবর্তী কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যখন প্রায় দেড়যুগ আগে কাজ শুরু করছিল তখন বিভিন্ন দিক থেকে প্রচণ্ড বিরোধীতার সম্মুখীন হয়। একেবারে অনভিজ্ঞ, এমন কি বলা যায় কিভাবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চলে তা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। এসব অজুহাত তুলে তীব্র বিরোধিতা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সময় প্রমাণ করেছে, ওইসব অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মহল বিশেষের স্বার্থে তোলা কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা।

চেম্বারের ওই সাবেক পরিচালক আরও জানালেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অভিজ্ঞতাবিহীন সাইফ পাওয়ারটেক দক্ষতার সাথে এনসিটি পরিচালনা করেছে তা নয়, তাদের উৎপাদশীলতাও ছিল ঈর্ষণীয়। সাধারণ বার্থগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।  এই কর্মদক্ষতা,  প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের কার্যক্রম প্রমাণ করেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম মূলত দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের ওপর নির্ভর করে, যা বিশেষায়িত অভিজ্ঞতা ছাড়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। সাইফ পাওয়ারটেক দেখিয়ে দিয়েছে, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজের জন্য অভিজ্ঞতা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতাই আসল শক্তি।

আজ সোমবার থেকে এনসিটি পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত চিটাগাং ড্রাইডক। আজ চুক্তি হয়েছে ড্রাইডকের সাথে। এক সময়ে চিটাগাং ড্রাইডক ছিল বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থা ( বিএসইসি)র প্রতিষ্ঠান। লোকসানে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয় । এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের পথে অগ্রসর হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রাইডকের সঙ্গে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার চুক্তির সিদ্ধান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভা অনুমোদন করেছে । সোমবার চুক্তির পর সাইফপাওয়ারটেক আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে।

সাইফপাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমীন জানিয়েছেন, ড্রাইডকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর সম্পন্ন। প্রয়োজনে পরবর্তীতেও এনসিটি পরিচালনায় সব রকমের সহযোগিতায় তৈরি সাইফপাওয়ারটেক। আমরা প্রতিষ্ঠানগতভাবে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। দেশের স্বার্থে এনসিটির কার্যক্রম যেন নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়, সে জন্য যা দরকার তা করব।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল ( সিসিটি ) পরিচালনায়ও নিয়োজিত সাইফপাওয়ারটেক। কমলাপুর আইসিডিতেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে এই প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে। এ কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাইফপাওয়ারটেকের সব কার্যক্রম এবং জনবল যথারীতি বহাল থাকবে।

এনসিটিতে সাইফপাওয়ারটেকের কার্যক্রম থেকে আবারও উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—চট্টগ্রাম বন্দরের মত সংবেদনশীল ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কাজ করার জন্য ‘অভিজ্ঞতা’ নামের শর্ত কতটা যৌক্তিক? নাকি রাষ্ট্রীয় সম্পদের কাজে দক্ষতার ভিত্তিতে যে কোনও প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করাই হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত?