“স্বৈরাচার হটেছি, এবার রাষ্ট্র গঠনের সময়”—চট্টগ্রামে হাসনাত আবদুল্লাহ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকা রোববার সন্ধ্যায় পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বহদ্দারহাট থেকে শুরু হওয়া বিশাল পদযাত্রা শেষে বিপ্লব উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নানা স্লোগানে মুখর হয় নগরী।
সমাবেশে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা সফলভাবে স্বৈরাচার পতন ঘটাতে পেরেছি, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনে ব্যর্থ হয়েছি। এবার সেই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে।” তিনি বলেন, “যারা অতীতে বাংলাদেশ শাসন করেছে, তারা জানত এ দেশ আর তাদের থাকবে না। তারা ভারত, লন্ডন বা আমেরিকায় পালানোর ব্যবস্থা করে রেখেছিল—সেকেন্ড হোম বানিয়েছিল। কিন্তু আমাদের তো আর পালানোর পথ নেই, আমাদের দেশ গড়তেই হবে।”
হাসনাত বলেন, “চট্টগ্রাম প্রতিরোধের শহর, লড়াইয়ের শহর। আমরা চাই চট্টগ্রাম হোক বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির শহর—সব জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত হোক। চট্টগ্রাম হবে জনগণের—not গুটি কয়েক পরিবারের।”
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পুরনো প্রজন্ম ভঙ্গুর অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর বিভক্ত সমাজ দিয়ে গেছে। পাহাড় বনাম সমতল, মুসলমান বনাম হিন্দু, এসব দ্বন্দ্ব আমরা পাইনি, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব এসবের সমাধান করা। তারা টাকা দিয়ে কেনা যায় না—প্রধানমন্ত্রীও পারেননি।”
সমাবেশে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র চাই। লুটপাটের রাজনীতি নয়, ইনসাফের বাংলাদেশ চাই। প্রতিটি প্রকল্পের হিসাব জনগণের কাছে দিতে হবে। মানুষ থানায়, সচিবালয়ে, এনআইডি সংশোধনে হয়রানির শিকার—নতুন বাংলাদেশে এ অবিচার চলবে না।”

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য বলায় বাধার শিকার হচ্ছেন। বাঁশখালীতে আমাদের কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছিলাম—বাধা দিলে লড়াই হবে, আর এই লড়াই আমরা জিতব।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। কেউ এ শহরের দিকে চোখ তুললে সারা দেশে বিদ্রোহ হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনূভা জাবীন, যুব শক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশের আগে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হন বহদ্দারহাট মোড়ে। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া পদযাত্রায় শ্লোগানে কেঁপে ওঠে নগরী—‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘বাংলা কি তোর বাপদাদার?’
সমাবেশ ঘিরে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্য ও সোয়াট টিম।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, গতকাল কক্সবাজারে এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা অভিযোগ করেন, তিনি সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন। এর জেরে চকরিয়ায় এনসিপির এক পথসভা মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়।
চট্টগ্রামের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সকালেই শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিকেলে রাঙামাটিতে অংশ নেন পথসভায়। তারা খাগড়াছড়িতে নতুন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।