২০২৫-এর আকাশচিত্র
এভিয়েশন ডেস্ক:
২০২৫ সাল বিদায় নিতে বাকি আর মাত্র ১১ দিন। দীর্ঘ মহামারি আর বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা কাটিয়ে এ বছর এভিয়েশন শিল্প এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। একদিকে যেমন যাত্রীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে ভূ-রাজনীতি আর সরবরাহ শৃঙ্খলের সংকট শিল্পটিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।
২০২৫ সালে বিশ্ব এভিয়েশন শিল্পের গতিপ্রকৃতি ও আইএটিএ (IATA)-র পর্যবেক্ষণ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো:
২০২৫: এভিয়েশন শিল্পের জন্য এক মাইলফলকের বছর
২০২৫ সালটি বিশ্ব এভিয়েশন খাতের জন্য ‘পুনরুত্থানের বছর’ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ বছর এই শিল্প প্রথমবারের মতো কিছু ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
১. আকাশচুম্বী যাত্রী সংখ্যা ও রাজস্ব
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA)-র হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে বিমান যাত্রীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৫০০ কোটির মাইলফলক ছাড়িয়েছে (আনুমানিক ৫২০ কোটি)। একইসাথে এই শিল্পের মোট রাজস্ব আয় প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলার অতিক্রম করেছে, যা এভিয়েশন ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
২. মুনাফার খতিয়ান
আইএটিএ-র তথ্যমতে, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইনসগুলোর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬.৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও আয়ের তুলনায় মুনাফার মার্জিন (৩.৭% থেকে ৩.৯%) এখনো কিছুটা কম, তবুও মহামারির ধাক্কা সামলে এই ধারাবাহিক মুনাফাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংকট ও চ্যালেঞ্জ: মেঘমুক্ত নয় আকাশ
সাফল্যের পাশাপাশি ২০২৫ সাল জুড়েই কিছু নেতিবাচক প্রভাব এভিয়েশন খাতকে তাড়া করে বেরিয়েছে:
- সরবরাহ শৃঙ্খল (Supply Chain) সংকট: নতুন উড়োজাহাজ ডেলিভারিতে বিলম্ব এবং যন্ত্রাংশের তীব্র সংকট এ বছর এয়ারলাইনসগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। বোয়িং ও এয়ারবাসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো বিমান সরবরাহ করতে না পারায় অনেক সংস্থাকে বাধ্য হয়ে পুরনো ও কম জ্বালানি-সাশ্রয়ী বিমান দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।
- জ্বালানি ও ব্যয় বৃদ্ধি: যদিও তেলের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে (গড় ৮৬-৮৭ ডলার প্রতি ব্যারেল), কিন্তু লেবার কস্ট বা কর্মীদের বেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এয়ারলাইনসগুলোর ওপর চাপের সৃষ্টি হয়েছে।
- ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: ইউক্রেন-রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের কারণে আকাশপথ পরিবর্তন এবং উচ্চ বীমা খরচের ফলে অনেক রুটে পরিচালন ব্যয় বেড়েছে।
সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ: ডিজিটাল ও সবুজ বিপ্লব
২০২৫ সাল এভিয়েশন খাতে কিছু নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে:
টেকসই জ্বালানি (SAF): ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ বছর সাশ্রয়ী বিমান জ্বালানি বা Sustainable Aviation Fuel (SAF) উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে (প্রায় ২১ লাখ টন)। যদিও এটি মোট চাহিদার ১ শতাংশেরও কম, তবুও পরিবেশবান্ধব উড্ডয়নের পথে এটি বড় পদক্ষেপ।
এআই ও ডিজিটাল সেবা: যাত্রীদের টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে বোর্ডিং পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির ব্যবহার এ বছর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কার্গো খাতের প্রবৃদ্ধি: ই-কমার্সের জয়জয়কারে এয়ার কার্গো বা পণ্য পরিবহন খাতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।
আইএটিএ (IATA) কী বলছে?
আইএটিএ-র মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ-এর মতে, ২০২৫ সাল প্রমাণ করেছে যে মানুষ ভ্রমণ করতে চায় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এভিয়েশন শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন: “সরবরাহ শৃঙ্খলের বাধা এবং পরিকাঠামোগত ঘাটতি আমাদের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকারকে অবশ্যই এসএএফ (SAF) উৎপাদনে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে এবং অতিরিক্ত করের বোঝা কমিয়ে এই শিল্পকে টেকসই করতে সাহায্য করতে হবে।”
২০২৫ সাল শেষে এভিয়েশন শিল্প এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল ও প্রযুক্তি নির্ভর। রেকর্ড যাত্রী আর আয়ের ওপর ভর করে ২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে আছে এই খাত, যেখানে মুনাফা আরও বেড়ে ৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।










