অবশেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এলো। জাতিসংঘের বিমান পরিবহন বিষয়ক সংস্থা আইসিএও রায় দিয়েছে রাশিয়াই দায়ী এমএইচ১৭ ভূপাতিত করার জন্য।
এভিয়েশন ডেস্ক:
আকাশে উড়ে যাচ্ছিল এক স্বপ্নভরা বিমান। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭। গন্তব্য ছিল কুয়ালালামপুর। যাত্রা শুরু হয়েছিল আমস্টারডাম থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের বিভীষিকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সেই স্বপ্ন। ২৯৮টি প্রাণ, তাদের পরিবার, ভবিষ্যত সবকিছুই থেমে গেল মুহূর্তের ব্যবধানে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য অবশেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এলো। জাতিসংঘের বিমান পরিবহন বিষয়ক সংস্থা আইসিএও রায় দিয়েছে রাশিয়াই দায়ী এমএইচ১৭ ভূপাতিত করার জন্য।
সোমবার (১২ মে) নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার সরকার যৌথভাবে আইসিএও-র এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করে। দুই দেশ ২০২২ সালে এই মামলা দায়ের করেছিল। এখন আইসিএও কাউন্সিল ক্ষতিপূরণের উপযুক্ত রূপ ও পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।
সেই মর্মান্তিক ঘটনার দিন পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে চলছিল তীব্র যুদ্ধ। একদিকে ইউক্রেনীয় সেনা, অন্যদিকে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী। তাদের দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে যায় এমএইচ১৭। এক ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় পুরো বিমান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৯৬ জন ডাচ নাগরিক, ৩৮ জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বা বাসিন্দা। পাশাপাশি ছিল মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানিসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক।
ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু সত্য উদঘাটনের পথ খুলে দেয় না, এটি ন্যায়বিচারের দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি বার্তা। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি ভোগ করতেই হবে।”
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, “আমরা আইসিএও-কে অনুরোধ করছি, যেন তারা দ্রুত ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় দায় স্বীকার করতে হবে।”
যদিও আইসিএও-র হাতে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নেই, তবে তাদের নীতিগত ও নৈতিক প্রভাব বিশাল। বিশ্বজুড়ে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র এই সংস্থার নিয়ম মেনে চলে।
এমএইচ১৭-র যাত্রীদের পরিবার এখনও প্রতিদিন বয়ে চলেছেন বেদনার ভার। কারও স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে, কারও ছেলে ফিরেনি স্কুল থেকে, কারও মা ছিলেন সেই বিমানে। এই রায় হয়তো তাদের চোখের জল শুকাবে না, কিন্তু অন্তত একটি স্বীকৃতি যে অপরাধটা হয়েছিল, আর সেই অপরাধের দায়ীর নাম রেকর্ডে লেখা হলো।