শিপিং ডেস্ক: কেরালা উপকূলে মেডিটেরিয়ান শিপিং কোম্পানি ( এমএসসি)’র জাহাজ এমএসসি এলসা থ্রি ডুবির ঘটনায় ব্যাপক পরিবেশ দূষণ এবং পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ে একই মালিকানাধীন আরেকটি জাহাজ আটক করা হয়েছে।
আটক জাহাজটির নাম এমএসসি আকিটেটা টু। থিরুভনন্তপুরমের ভিজিঞ্জাম বন্দরে তা আটক করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আদায় নিশ্চিত করতে কেরালা হাইকোর্টের নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গত ২৫ মে কেরালার আলাপ্পুঝা উপকূলে ডুবে যায় ৬৪৩টি কনটেইনার ভর্তি বিভিন্ন রাসায়নিক ও বিপজ্জনক সামগ্রীসহ এমএসসি এলসা থ্রি। ডুবে যাওয়ার পর উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক পেলেট বা ‘নার্ডল’, তেলের আ্স্তরণ এবং ভাসমান বর্জ্য। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেরালার উপকূলীয় পরিবেশ ও মৎস্যনির্ভর অর্থনীতি।
এই প্রেক্ষাপটে, কেরালা সরকার সোমবার হাইকোর্টে একটি অ্যাডমিরালটি মামলা দায়ের করে। দাবি করা হয় ৯৫৩১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ। মামলার শুনানিতে আদালত আদেশ দেন ভিজিঞ্জাম বন্দরে নোঙর করা এমএসসি আকিটেটা টু জাহাজটি আটকে থাকবে এবং কেবল মালিকপক্ষ ক্ষতিপুরণের অর্থ আদালতে জমা দেয়ার পর তা নোঙর তুলবে।
পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর ভয়াবহ প্রভাব
সরকারের মামলায় বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর ৬০ টনের বেশি নার্ডল উপকূলে ছড়িয়ে পড়ে। ৬১টি কনটেইনার উপকূলে এসে পৌঁছে এবং বিশাল এলাকা জুড়ে বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে। উপকূলজুড়ে ৬টি প্রাণীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ডলফিন ও একটি তিমি। মৃত্যুর পেছনে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণকেই দায়ী করা হচ্ছে।
পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলেদের জীবিকাও চরম হুমকির মুখে পড়েছে। মাছ বিক্রি কমে যাওয়ায় বাজারে ধস নেমেছে। এতে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৯৫৩১ কোটি টাকার দাবির মধ্যে রয়েছে:
দূষণজনিত ক্ষতি: ৮৬২৬.১২ কোটি টাকা
পরিবেশ পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থ: ৩৭৮.৪৮ কোটি টাকা
জেলেদের আর্থিক ক্ষতি: ৫২৬.৫১ কোটি টাকা
ভারতের Admiralty (Jurisdiction and Settlement of Maritime Claims) Act, 2017-এর অধীনে আদালত যেকোনো ‘সিস্টার শিপ’ বা একই মালিকানাধীন জাহাজকে আটক করতে পারে, যদি তার মালিক পক্ষ আগের কোনো ক্ষতিপূরণ বা দায় আদায় না করে। এছাড়া Merchant Shipping Act, 1958 এবং Environment Protection Act, 1986 অনুসারেও পরিবেশগত ক্ষতির দায়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
গত মাসে এমএসসি কোম্পানির আরও একটি জাহাজ এমএসসি মানসা এফ–কেও উচ্চ আদালতের আদেশে অস্থায়ীভাবে আটক করা হয়েছিল। পরে মালিকপক্ষ ৬ কোটি টাকা জমা দিলে সেটি মুক্তি পায়।
আদালত এই মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ জুলাই নির্ধারণ করেছে