Home শিপিং মোংলায় ‘সাজানো ডাকাতি’: জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জড়িত

মোংলায় ‘সাজানো ডাকাতি’: জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জড়িত

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, খুলনা: মোংলা বন্দরের কাছে নোঙররত বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। সংস্থাটির দাবি, ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে কোনো বহিরাগত ডাকাতির নয়, বরং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি ‘সাজানো ডাকাতি’, যেখানে জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ বেশ কয়েকজন নাবিক ও স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা সরাসরি জড়িত।

গত ২৭ মে রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে মোংলার বেইস ক্রিক এলাকায় নোঙররত এমভি সেজুতি নামের একটি জাহাজে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ অন্তত ১২ জন ডাকাত প্রবেশ করে। তারা ক্রুদের জিম্মি করে কিছু যন্ত্রাংশ ও মালামাল লুট করে পালিয়ে যায় বলে প্রথমে ধারণা করা হয়।

তবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করে এবং জাহাজের মূল্যবান মালামাল উদ্ধারে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে ছিল ইঞ্জিনের স্পেয়ার পার্টস, বিভিন্ন সাইজের বিয়ারিং, ব্যাটারি ও চার্জারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ।

কোস্ট গার্ডের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, এটি একটি সাজানো নাটক। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ব্যক্তিরা জানান, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় অপরাধীদের নিয়ে ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়, যাতে লুট হওয়া মালামাল বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগি করা যায়।

আরও জানা গেছে, এমভি সেজুতি-তে কর্মরত বেশিরভাগ নাবিক বিগত ছয় থেকে সাত মাস ধরে নিয়মিত বেতন পাচ্ছিলেন না। ফলে তাদের মধ্যে মালিকপক্ষের প্রতি ক্ষোভ জন্মায় এবং তারা পূর্বেও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ডাকাতদের কাছে বিক্রি করেছেন। এতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, এটি একটি ধারাবাহিক চক্রের অংশ কিনা।

চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, এতো বড় একটি ঘটনার পরেও জাহাজের মালিক ক্যাপ্টেন সাহিকুল ঘটনাস্থলে আসতে অস্বীকৃতি জানান। কোস্ট

গার্ড বলছে, মালিকপক্ষের অবহেলা এবং নাবিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, জাহাজের কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের জড়িত থাকার বিষয়টি গভীরভাবে তদন্তের দাবি রাখে। একইসঙ্গে, এই সাজানো ডাকাতির ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা নিয়েও তদন্ত প্রয়োজন।

বর্তমানে উদ্ধারকৃত মালামাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আটককৃতদের থানায় সোপর্দের কার্যক্রম চলছে।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, দেশের জলসীমায় আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় তারা সদা তৎপর এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট আল সাফা শিপিং লাইনসের খুলনার ব্যবস্থাপক শরিফ জাহিদুল করিম অমিত জানিয়েছেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান পিএনএন শিপিং লাইনসের মালিকানাধীন ‘এম ভি সেজুঁতি’ ভারত থেকে পাথর বোঝাই করে গত বছরের ২২ জুন মোংলা সমুদ্রবন্দরের বেসক্রিক এলাকায় নোঙর করে। পণ্য খালাস হওয়ার সময় বন্দরে অস্থানকালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজটি প্রায় এক বছর ধরে বন্দর চ্যানেলে আটকে রয়েছে। জাহাজটিতে চিফ অফিসারসহ সাত ক্রু ও স্টাফ রয়েছেন।