বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সামনে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই নতুন বাংলাদেশের নির্মাণ সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সেই শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পঞ্চম আগস্ট ছিল ভয়াবহ এক দানবের পতনের দিন। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তা অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে কখনো আপস করবে না বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জনগণের আশার প্রতিফলন ঘটাতেই হবে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটলেও তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ভীতির রাজনীতি করেছে, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
হেফাজতের সিনিয়র নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ঐক্য নষ্ট করার যে কোনো প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী শক্তির সহায়ক হবে। বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ বিচ্যুত হয়েছে, অথচ জিয়াউর রহমানের দল এখনো গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছে।
আহতদের পরিবার ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের কষ্ট, বঞ্চনা ও বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণা তুলে ধরেন। কেউ বলেন, এখনো চিকিৎসা হয় না, হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। কেউ বলেন, হত্যাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রুহুল কবির রিজভী। বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাসদের মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার।
এ অনুষ্ঠান দিয়েই শুরু হলো বিএনপি ঘোষিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর ৩৬ দিনের কর্মসূচি।