বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চলতি ২০২৫ সালের শুরুতেও চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত কন্টেইনার জাহাজ যাতায়াত করতো ৯৬ টি। বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে আরও জাহাজের অনুমোদন দিয়েছে। জাহাজ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে তা পৌঁছেছে ১১৮ টিতে। নির্বিচারে অনুমোদন দিয়ে বন্দর কর্তৃৃৃৃৃপক্ষ এখন পড়েছে বিপাকে।
বন্দর কর্তৃৃৃৃৃপক্ষ পরিস্থতি সামাল দিতে পারছে না। জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে এসে দিনের পর দিন অপেক্ষমান থাকতে হচ্ছে ঘাটে ভিড়ার জন্য। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্দর কর্তৃৃৃৃৃৃৃপক্ষ এখন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএ্র্রএ) কে বলেছে কমপক্ষে ১৫ টি জাহাজ কমিয়ে ফেলতে। এতে তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে হঠাৎ করে এভাবে জাহাজ সংখ্যা কমানো যায় না। এভাবে কমাতে গেলে শিপিং কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক শিপিং সময়সূচি ভেঙে পড়বে। আর এর জেরে জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাবে। এমনকি অতিরিক্ত সারচার্জ আরোপের মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে।
বিএসএএ আরও উল্লেখ করেছে যে, হঠাৎ করে ১৫টি জাহাজ কমিয়ে দেওয়া হলে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হবে। এর ফলে রপ্তানি বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া, একবার কোনো জাহাজ বাদ দেওয়া হলে তা পুনঃরায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হবে। মেইন লাইন অপারেটর-এমএলও’রা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স-এর একজন প্রাক্তন পরিচালক বিজনেসটুডে২৪ কে এ প্রসঙ্গে বলেন, কন্টেইনার জাহাজ নিয়ে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে তার জন্য দায়ি বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের সক্ষমতার কথা বিবেচনায় না রেখে একের পর এক জাহাজের জন্য অনুমোদন দিয়েছে শিপিং এজেন্টদের। বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান তাতে জাহাজ সংখ্যা কমানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তবে, কেন সবকিছু বিবেচনায় না নিয়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ২২ টি জাহাজের অনুমোদন দেয়া হলো সেটাও তদন্ত করে দেখা আবশ্যক বলে তিনি মনে করেন।
জাহাজ জটের জন্য অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শিল্প-কারখানার মালিকদের মধ্যে। সময় মতো কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছবে কী না তা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায়। এক পোশাক শিল্প মালিক জানান, তার কারখানার আমাদনি করা কাঁচামাল রয়েছে এমন একটি জাহাজ গত ১৯ জুলাই থেকে বহির্নোঙরে, আরেকটি জাহাজ ২০ জুলাই থেকে বহির্নোঙরে অপেক্ষমান। অপরদিকে, কারখানায় কাঁচামালের মজুত শেষ পর্যায়ে নেমে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ঘাটে ভিড়ানো যায় ১৬টি জাহাজ। এগুলোর মধ্যে কন্টেইনার জাহাজের জন্য বরাদ্দ থাকে ১০টি। বন্দরের পরিচালক ( ট্রাফিক ) এনামুল করিম অভিমত দেন যে বহির্বিশ্বে বন্দরের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে জাহাজ সংখ্যা ৯৬টি থেকে ১০০টির মধ্যে সীমিত রাখা প্রয়োজন। সেই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতে বর্তমানে জাহাজের অপেক্ষমান সময় বেড়েছে। বেড়ে গেছে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যাও। এতে বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে । চলতি বছরের শুরুতেও কন্টেইনার জাহাজের অপেক্ষমান সময় ছিল দুই দিনের মধ্যে। তখন জাহাজ অপেক্ষায় থাকতো ৭/৮টি।
বন্দর কর্তৃপক্ষসূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কমপক্ষে ১৫ টি কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য বিএসএ্র্রএকে জানানো হয়। শিপিং এসোসিয়েশন এক পত্রে তিন মাস সময় চেয়ে বলেছে, এই সময়ের মধ্যে বন্দরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হোক এবং তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। তারা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে।
বিএসএ্র্রএ চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তে তারা কোনো সম্মতি দেয়নি। বরং তারা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত দেওয়ার কথা জানিয়েছিল এবং সেই মতামত ২৪ জুলাইয়ের চিঠিতে তারা তুলে ধরেছে। তিনি দাবি করেন যে, গত ছয়-সাত মাসে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলন, ঈদ ও অন্যান্য উৎসব মিলিয়ে প্রায় ৬৬ দিনের ছুটি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতির নষ্ট হয়ে যাওয়া, ট্রেইলার মালিকদের ধর্মঘট, মৌসুমি দুর্যোগ এবং প্রথম প্রান্তিকে বার্থ অপারেটরদের ‘গো-স্লো’ কর্মসূচি। এসব কারণেই বন্দরে কনজেশন তৈরি হয়েছে এবং বার্থে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য অপেক্ষার সময় বেড়েছে।