Home First Lead কন্টেইনার শিপিং খাত: অতিরিক্ত জাহাজে বিপর্যয়ের মুখে

কন্টেইনার শিপিং খাত: অতিরিক্ত জাহাজে বিপর্যয়ের মুখে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বিশ্ব কনটেইনার শিপিং খাতে ভয়াবহ ভারসাম্যহীনতার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ ও চাহিদার ফাঁরাক আগামী বছরগুলোতে ধাপে ধাপে বাড়বে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। একদিকে জাহাজ নির্মাণে রেকর্ড বিনিয়োগ, অন্যদিকে পুরনো জাহাজ ধ্বংস কার্যত থেমে যাওয়ায় এই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

অতিরিক্ত জাহাজের ঢল:

বিশ্ববিখ্যাত শিপিং বিশ্লেষণ সংস্থা ব্রেমার তাদের ‘কোয়ার্টারলি কনটেইনার ফ্লিট স্ট্যাটিস্টিকস’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই ২৩ লাখ টিইইউ ধারণক্ষমতার নতুন জাহাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এটি ২০২৪ সালের শেষার্ধে দেওয়া ৩৮ লাখ টিইইউ-এর তুলনায় কিছুটা কম হলেও, আকারের দিক থেকে এখনো বিপুল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান প্রবণতায় বৃহৎ আকারের জাহাজের তুলনায় ছোট ও আঞ্চলিক জাহাজ নির্মাণে আগ্রহ বাড়ছে। ১৪ হাজার টিইইউ বা তার বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজের অর্ডার ২০২৪ সালে যেখানে ছিল ১৫৯টি, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই তা এসেছে ৭৭টি। অন্যদিকে ৪ হাজার টিইইউ পর্যন্ত ছোট আকারের জাহাজের অর্ডার এই সময়েই ৭৪টি, যা প্রায় পুরো ২০২৪ সালের অর্ডারের সমান (৮০টি)।

বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরনো জাহাজের অনুপাত:

ব্রেমারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০ বছরের বেশি বয়সী ছোট আকারের জাহাজের অনুপাত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি বহরের কার্যক্ষমতা ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।

১ জুলাই পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্ডারবুক দাঁড়িয়েছে ৯৬ লাখ টিইইউতে, যা চলমান মোট বহরের ৩০.৫ শতাংশ। বিশ্লেষক জনাথন রোচ বলেন, “এই পুনর্গঠিত বহরের জোয়ার এবং মন্থর বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি মিলিয়ে সরবরাহ ও চাহিদার ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে।”

তার ভাষায়, “২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ২৭ শতাংশ অতিরিক্ত বহর থাকবে বাজারে। ২০২৫ সালে এই হার ১৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ১৯ শতাংশে দাঁড়াবে।”

জাহাজ ধ্বংস কার্যত বন্ধ:

সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে জাহাজ ধ্বংসের অভাব। আলফালাইনারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মাত্র ১০টি জাহাজ ধ্বংস করা হয়েছে, যার সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ৫,৪৫৪ টিইইউ। ২০২৪ সালের একই সময় ধ্বংস হয়েছিল ৪৮,৬০০ টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজ।

এর পেছনে রয়েছে উচ্চ ভাড়ার বাজার, রেড সি ঘুরে কেপ অফ গুড হোপ হয়ে জাহাজ চলাচলের বাড়তি সময়, এবং বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহের চাহিদা। চাটার টনেজের ঘাটতির কারণে জাহাজমালিকরা পুরনো জাহাজও সচল রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

আলফালাইনার বলছে, “কোভিড, রেড সি সংকট, আমদানি-শুল্ক, পোর্ট জট, ধর্মঘট ও সরবরাহ চেইনের অচলাবস্থা—এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিখে এখন কিছু ‘বাড়তি’ জাহাজ হাতে রাখাকেই নিরাপদ ভাবছে শিপিং কোম্পানিগুলো।”

২০২৮ সালে ধাক্কা আসতে পারে প্রবলভাবে:

ব্রেমার পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৮ সালেই বর্তমান চক্রের সবচেয়ে দুর্বল সময় আসবে। ওই বছর নতুন নির্মিত জাহাজের ডেলিভারি সর্বোচ্চ হবে এবং একযোগে রেড সি দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল ফিরে আসবে। এর ফলে অতিরিক্ত সরবরাহ আরও প্রকট হবে, যা ভাড়া, লাভ ও কোম্পানির টিকে থাকার সক্ষমতা—সবকিছুতে প্রভাব ফেলবে।

জনাথন রোচ বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতিতে যেকোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা এই খাতকে তীব্রভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে। সেই দিক থেকে আগামী বছরগুলো শিপিং খাতের জন্য হবে গভীর অনিশ্চয়তার সময়।”

বিশ্ব বাণিজ্য, শিপিং ও সরবরাহ খাতের সঠিক বিশ্লেষণ জানতে প্রতিদিন ভিজিট করুন businesstoday24.com