আইটি ডেস্ক: ইন্টারনেট যুগে বদলে গেছে মানুষের জানার উপায়, বদলে গেছে আয়ের ধরনও। ঘরে বসে শুধুমাত্র লেখার দক্ষতা দিয়ে যে আয় করা যায়, তা এখন অনেকের কাছেই বাস্তবতা। কন্টেন্ট রাইটিং এখন শুধুমাত্র পেশা নয়, বরং এক ধরনের শিল্প। এই লেখালেখির পেছনে আছে লক্ষ্য, কৌশল আর অনেক পড়াশোনা।
কী এই কন্টেন্ট রাইটিং?
সোজা ভাষায়, কন্টেন্ট রাইটিং মানে হলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পাঠকের জন্য তথ্যপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য লেখা তৈরি করা। যেমন ব্লগ পোস্ট, ওয়েবসাইটের হোমপেজ, পণ্য বিবরণ, স্ক্রিপ্ট, এমনকি ফেসবুকের বিজ্ঞাপনমূলক লেখা। লেখার মাধ্যমে পাঠকের মনোযোগ ধরা, তথ্য দেওয়া এবং অনেক সময় পণ্য বা সেবা বিক্রির পথ করে দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।
শেখার শুরু কোথা থেকে?
লিখতে শিখতে হয় লেখার মাধ্যমেই। প্রতিদিন ৩০ মিনিট নিয়ম করে লেখা এবং পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এর প্রথম ধাপ। বাংলায় বা ইংরেজিতে পছন্দের বিষয় নিয়ে লিখুন। এরপর লেখার কাঠামো বুঝতে হবে—কীভাবে হেডলাইন তৈরি হয়, কোন জায়গায় সাবহেডিং দরকার, কোন বাক্য বড় হয়ে যাচ্ছে, কোন প্যারাগ্রাফে পাঠক বিরক্ত হতে পারে।
এছাড়া SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকলে তা লেখাকে গুগল সার্চে উপযোগী করে তোলে। অনলাইনে বেশ কিছু বিনামূল্যের কোর্স আছে যেখান থেকে এই বিষয়গুলো সহজে শেখা যায়। যেমন: ইউডেমি, কৌরসেরা বা বাংলায় 10 মিনিট স্কুল ও বোহুবৃক্ষ।
রাইটিং টুলস ও রিসার্চ: সহায়ক সঙ্গী
ভাষার ভুল কমাতে Grammarly, লেখাকে সহজ করতেও Hemingway Editor এর মতো টুল কাজে আসে। আর যেহেতু কন্টেন্ট রাইটিংয়ের বড় অংশই তথ্যভিত্তিক, তাই নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে রিসার্চ করতে পারাটা খুবই জরুরি।
লেখা দিয়েই অনলাইনে আয়—কীভাবে সম্ভব?
লেখার দক্ষতা আয়মুখী করতে চাইলে নিচের দিকগুলো খুলে যায়—
- ফ্রিল্যান্সিং সাইট: Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল খুলে কাজ পাওয়া যায়। কেউ প্রোডাক্ট রিভিউ চায়, কেউ চায় ব্লগ পোস্ট বা ওয়েবসাইটের পেজ।
- নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েবসাইট: নিয়মিত মানসম্পন্ন লেখা দিলে Google AdSense থেকে আয় করা যায়। এছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে নির্দিষ্ট পণ্যের লিংক দিয়ে বিক্রি বাড়িয়ে কমিশন অর্জন সম্ভব।
- কন্টেন্ট এজেন্সি বা রিমোট কাজ: এখন অনেক ডিজিটাল এজেন্সি রিমোট কন্টেন্ট রাইটার খোঁজে—বাংলাদেশে ও বিদেশেও।
- সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট: ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ব্র্যান্ডের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের জন্য কনটেন্ট রাইটার দরকার হয়।
স্ক্রিপ্ট রাইটিং ও ই-বুক: ইউটিউবের স্ক্রিপ্ট লিখে আয় করা যায়। আবার ই-বুক লিখে আমাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে বিক্রিও করা সম্ভব।
প্রতিভার চাইতে দরকার ধৈর্য আর ধারাবাহিকতা
অনেকেই ভাবে লেখার জন্য প্রচণ্ড প্রতিভা দরকার। আসলে তা নয়—ধৈর্য, অনুশীলন আর ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে দক্ষতা। ভুল হলে শিখতে হবে, সমালোচনা নিতে হবে ইতিবাচকভাবে।
একসময় হয়তো আপনি নিজের নামে বই প্রকাশ করবেন, হয়তো দেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের রিমোট কনটেন্ট রাইটার হবেন। সম্ভাবনার দ্বার তখন শুধু খোলা নয়, বরং উন্মুক্ত।