Home বিনোদন কমলা ও কাঞ্চনের কাহিনি

কমলা ও কাঞ্চনের কাহিনি

(একটি লোকজ রূপকথা)

অনেক অনেক দিন আগের কথা। বাংলার এক নদীঘেঁষা গ্রামে বাস করত এক ধনী জমিদার। তাঁর ছিল একমাত্র কন্যা -নাম কমলা। সে ছিল যেমন রূপবতী, তেমনি গুণবতী। গরিবদের দুঃখে কাঁদত, পাখিদের জন্য চাল ছিটিয়ে দিত, গাছের ছায়ায় বসে বুনত নানা ফুলের মালা।

ওই একই গ্রামে বাস করত এক যুবককাঞ্চন। সে ছিল মাটির চাষা, পিতৃহীন, কিন্তু ছিল অসাধারণ মেধাবী, পরিশ্রমী আর সাহসী। জমিদারের বাগানে সে মাঝে মাঝে কাজ করত। সেখানেই প্রথম দেখা হয় কমলা আর কাঞ্চনের।

প্রথমে চোখাচোখি, তারপর একদিন কাঞ্চন বৃষ্টিতে ভিজে গাছের তলায় আশ্রয় নেয়। কমলা তখন তাকে একখানা শুকনো গামছা দিয়ে বলে, “ভিজে গেলে সর্দি হবে।”

সেই থেকে এক চুপচাপ ভালোবাসা শুরু হয়।

প্রেমের বাঁধন ও বাধা

কিন্তু সমাজ কি এত সহজে মেনে নেয় জমিদার-কন্যা আর চাষার প্রেম?
একদিন জমিদার জানলেন সব কিছু। তিনি হুকুম দিলেন-“এই চাষার পা যেন আমার বাড়ির দিকে না পড়ে!”

কাঞ্চনকে গ্রামছাড়া করা হলো। বিদায়ের দিন সে বলল, “আমি ফিরে আসব, কমলা। তোমার জন্য আমার প্রাণ থাকলে ফিরব।”

কমলা সেই থেকে একটাই কাজ করত—প্রতিদিন সকালে নদীর ধারে বসে কাঞ্চনের ফিরে আসার অপেক্ষা করা। দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়িয়ে যায়। চারপাশে বদল আসে-কমলা হয় এক নিঃসঙ্গ নারী, চুলে পাক পড়ে, মুখে ক্লান্তি জমে।

অলৌকিক প্রত্যাবর্তন

একদিন সন্ধেবেলা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে কমলা একটি শুকনো বটপাতায় চোখ রাখল। পাতাটি হঠাৎ করে উড়ে গিয়ে তার পায়ে এসে পড়ে। সে অবাক হয়ে দেখে পাতায় লেখা-“কমলা, আমি ফিরছি। নদীটা যেদিকে বাঁক নেয়, আমি ঠিক সেদিকেই।”

সে দৌড়ে যায় নদীর মোহনায়। হঠাৎ আকাশে বিজলি চমকে ওঠে, আর সে দেখতে পায়-এক নৌকা ধীরে ধীরে তীরে ভিড়ছে। নৌকায় দাঁড়িয়ে এক যুবক, তার মুখে হাসি, চোখে জল।

এ যেন ঠিক সেই কাঞ্চন-তবে আরও পরিণত, আরও দৃঢ়।

কাঞ্চন ফিরে এসেছিল। এতদিন সে ছিল পরদেশে, কঠিন শ্রমে জীবন গড়ছিল, কেবল একদিন কমলার মুখ দেখার আশায়।

শেষ পরিণতি

কমলার বাবা তখন আর বেঁচে নেই। জমিদারির দম্ভ অনেক আগেই শেষ। কমলা আর কাঞ্চন গ্রামের প্রান্তে একটি ছোট বাড়ি বানিয়ে শুরু করে তাদের নতুন জীবন-ভালোবাসা, শান্তি আর প্রার্থনায় ভরা।

তাদের জীবন শেষে গ্রামবাসী বলে, “কমলা আর কাঞ্চনের ভালোবাসা নদীর জলের মতো-চুপচাপ বয়ে চলে, কখনো না থেমে।”


এই কাহিনির মূল বার্তা

শ্রেণিবিভাজনের ওপরে ভালোবাসা জেতে পারে

অপেক্ষা কখনো বৃথা যায় না

সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো মরে না-তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়