Home কলকাতা বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের নতুন ‘কালাদান’ রুট

বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের নতুন ‘কালাদান’ রুট

বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দেশটির মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের একমাত্র করিডর ‘চিকেন নেক’-এর বিকল্প পথ হিসেবে একটি নতুন ট্রানজিট রুটের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে নয়াদিল্লি। এই পথের সূচনা হবে কলকাতা বন্দর থেকে এবং তা জলপথ, নদীপথ ও সড়কপথ মিলিয়ে পৌঁছে যাবে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’-কে অনুমোদন দিয়েছে, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে।

নতুন প্রস্তাবিত করিডর অনুযায়ী, কলকাতা থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সিটওয়ে (আকিয়াব) বন্দরে পৌঁছবে পণ্যবাহী জাহাজ। সেখান থেকে কালাদান নদীপথ ধরে যাত্রা হবে পালেটায়, যা মায়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এরপর মায়ানমারের ভূখণ্ড অতিক্রম করে সড়কপথে পণ্য যাবে ভারতের মিজোরামের জোরিনপুইয়ে। এই রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুনভাবে নির্মিত শিলং-শিলচর চার লেনের জাতীয় সড়ক, যা এই করিডরকে আরও প্রসারিত করবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গভীরে।

ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত ১৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে। এই পথ শেষপর্যন্ত মায়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী পাঁচগ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে এবং পরবর্তীতে জোরিনপুই হয়ে লুংলেই, আইজলসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে পৌঁছাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক মন্তব্য—“উত্তর-পূর্ব ভারত স্থলবেষ্টিত, আর তার সমুদ্রগমনের একমাত্র দ্বার বাংলাদেশ”-ভারতের দৃষ্টিকোণে উদ্বেগের বিষয়। এর প্রেক্ষিতে বিকল্প রুট নিশ্চিত করতে দিল্লির এই পদক্ষেপ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জও। রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যেখানে সক্রিয় রয়েছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীসহ অন্যান্য সশস্ত্র দল। ফলে মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা কালাদান প্রকল্পের অগ্রগতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

এছাড়া, এই বিকল্প করিডর চালু হলে শুধু বাণিজ্যই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেনা মোতায়েন ও রসদ সরবরাহেও বড় সুবিধা হবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে সীমান্তে চীনা আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে এই বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারতের কৌশলগত প্রস্তুতি আরও জোরদার করবে।

সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিলং-শিলচর সড়ক নির্মাণ শেষ হলে এই পথের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে নেমে আসবে ৫ ঘণ্টায়। একদিকে যেমন তা উত্তরের বাজারে বাণিজ্য প্রবাহ বাড়াবে, তেমনি ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।