বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি আধুনিক প্রযুক্তি যা যন্ত্রকে মানুষের মতো চিন্তা করার ক্ষমতা প্রদান করে। এটি কম্পিউটার বা যন্ত্রকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয় যাতে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিখতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সহজ কথায় বলা যায় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধির অনুকরণ করে যন্ত্রকে সক্ষম করে তোলে যাতে তারা জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আপনার স্মার্টফোনে যে ভয়েস সহকারী রয়েছে যা আপনার কথা শুনে উত্তর দেয় সেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সাধারণ উদাহরণ। এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কাজকে সহজতর করা এবং দক্ষতা বাড়ানো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেমন স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষা পরিবহন এবং বিনোদন। এটি তথ্য বিশ্লেষণ করে প্যাটার্ন খুঁজে বের করে যা মানুষের পক্ষে সময়সাপেক্ষ হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা অনেক পুরনো। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানীরা এই ধারণা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং প্রথমে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে যন্ত্র কি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে। তারপর থেকে এই ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রথম দিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র সাধারণ নিয়মাবলী অনুসরণ করে কাজ করত। কিন্তু এখন এটি তথ্য থেকে শিখে নিজেকে উন্নত করে। এই প্রযুক্তির বিকাশে কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি এবং বিপুল পরিমাণ তথ্যের উপলব্ধতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ অনলাইন কেনাকাটায় যে পণ্য সাজেশন পাওয়া যায় সেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক কাজের ধরনগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত সাধারণ বুদ্ধিমত্তা যা একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়। এটি শুধুমাত্র সেই কাজটি করতে পারে এবং অন্য কিছুতে সক্ষম নয়। উদাহরণস্বরূপ একটি যন্ত্র যা ছবি থেকে বস্তু চেনে সেটি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ। এটি খুব দক্ষ কিন্তু সীমিত। দ্বিতীয়ত যন্ত্র শিক্ষা যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে যন্ত্রকে তথ্য দেওয়া হয় এবং সে তথ্য থেকে শিখে নিজেকে উন্নত করে। যন্ত্র শিক্ষায় তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে। প্রথমটি তত্ত্বাবধানে শিক্ষা যেখানে যন্ত্রকে সঠিক উত্তর সহ তথ্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ ইমেল ফিল্টারিং যা স্প্যাম চেনে। দ্বিতীয়টি অতত্ত্বাবধানে শিক্ষা যেখানে যন্ত্র নিজে থেকে তথ্যের গ্রুপ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ গ্রাহকদের আচরণ অনুসারে গ্রুপিং। তৃতীয়টি শক্তিবর্ধন শিক্ষা যেখানে যন্ত্র ভুল থেকে শিখে। এটি খেলায় ব্যবহৃত হয় যেমন দাবা খেলার যন্ত্র।
তৃতীয় মৌলিক ধরন হলো গভীর শিক্ষা যা যন্ত্র শিক্ষার একটি উন্নত রূপ। এটি মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের মতো স্তরবিশিষ্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। গভীর শিক্ষা জটিল তথ্য থেকে প্যাটার্ন খুঁজে বের করে যা অন্য পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ স্বয়ংচালিত গাড়ি যা রাস্তার চিহ্ন চেনে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ছবি ভিডিও এবং ভাষা প্রক্রিয়াকরণে খুব কার্যকর। গভীর শিক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য এবং শক্তিশালী কম্পিউটার দরকার। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো দুর্বল বুদ্ধিমত্তা যা নির্দিষ্ট কাজ করে এবং অন্যটি শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের মতো সব কাজ করতে পারে। বর্তমানে আমরা দুর্বল বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছি কিন্তু শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতের লক্ষ্য।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অনেক। এটি সময় বাঁচায় এবং মানুষের ভুল কমায়। উদাহরণস্বরূপ চিকিত্সা ক্ষেত্রে এটি রোগ নির্ণয় করে দ্রুত সাহায্য করে। এছাড়া পরিবহনে এটি যানজট কমায় এবং নিরাপত্তা বাড়ায়। ব্যবসায় এটি তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত সাহায্য করে। তবে এর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন। যন্ত্র যে তথ্য শিখে সেটি যদি ব্যক্তিগত হয় তাহলে সমস্যা হয়। দ্বিতীয়ত যন্ত্রে পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে যদি তথ্য পক্ষপাতমূলক হয়। উদাহরণস্বরূপ চাকরির আবেদন বিশ্লেষণে যদি পুরুষদের প্রাধান্য দেয় তাহলে অন্যায় হয়। তৃতীয়ত চাকরির ক্ষতি হতে পারে কারণ অনেক কাজ যন্ত্র করে নেবে। এছাড়া নৈতিক প্রশ্ন উঠে যেমন যন্ত্র কি সিদ্ধান্ত নেবে যা মানুষের জীবন প্রভাবিত করে।
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হবে। এটি মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করে দেবে। তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মকানুন এবং নৈতিকতা মেনে চললে এটি মানবজাতির উন্নয়নে সাহায্য করবে। এই সিরিজের প্রথম অংশ হিসেবে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক ধারণা তুলে ধরেছে। পরবর্তী অংশে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে যেমন এর ইতিহাস এবং প্রয়োগ। এই প্রতিবেদন পড়ে আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবেন এবং এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করবেন।









