আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের হায়দরাবাদে মাদকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে এক উচ্চশিক্ষিত রেস্টুরেন্ট উদ্যোক্তা ও পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ড্রাগ ল’ এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ‘ঈগল’। শহরের বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ, নামীদামি পাব ও কর্পোরেট মহলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের জাল উন্মোচন করেছে বাহিনীটি। মাদক পাচারে ব্যবহৃত হয়েছে চটি জুতার গোড়ালির ফাঁক, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন ও কুরিয়ার সার্ভিস।
মূল অভিযুক্ত ৩৪ বছর বয়সী সূর্য অন্নামানেনি, একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমবিএ স্নাতক। তিনি হায়দরাবাদের কোমপল্লি এলাকার বাসিন্দা এবং ‘মালনাডু কিচেন’ নামের রেস্তোরাঁর মালিক। তাঁর গাড়ি তল্লাশি করে পুলিশ ১০ গ্রাম কোকেন, ৩.২ গ্রাম ‘ওজি কুশ’ গাঁজা ও ১.৬ গ্রাম এক্সটেসি ট্যাবলেট উদ্ধার করে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য, একটি নারীদের চটির গোড়ালিতে কোকেন লুকিয়ে পাঠানো হয়েছিল দিল্লি থেকে—‘ফাতিমা’ ছদ্মনামে একটি কুরিয়ারের মাধ্যমে।
ঈগল-র কর্মকর্তা চেন্নুরি রূপেশ জানান, সূর্যর রেস্তোরাঁ ও গাড়িকে মাদক সংরক্ষণের গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তদন্তে দেখা গেছে, তিনি বেনাপল হিমায়াতনগর, করিমনগর ও খাজাগুড়া থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন এবং নিয়মিত দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও গোয়া ভ্রমণ করতেন নাইজেরীয় মাদক সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায়।
সূর্য অন্নামানেনির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, নাইজেরীয় পাচারকারী নিক, জেরি, ডেজমন্ড, স্ট্যানলি ও প্রিন্স-এর সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন হতো। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে—টারনিয়ন হসপিটালিটি—ব্যাংক লেনদেনে এক লাখ ৩৯ হাজার টাকা ও এটিএমের মাধ্যমে ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করে কোকেন ও এমডিএমএ সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সেগুলো চালান হতো শহরের অভিজাত বারে।
পুলিশের দাবি, প্রিজম পাব, ফার্ম পাব, ব্লক ২২, বার্ড বক্স, এক্সোরা, ব্রডওয়ে ও কোয়েক অ্যারেনাসহ একাধিক অভিজাত ক্লাবেই এই মাদক সরবরাহ হতো। সূর্য স্বীকার করেছেন, তিনি এসব পাবের ‘গোপন ঘরে’ মাদক সেবন করতেন। মাদক সেবনের তালিকায় আছেন তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী, চিকিৎসক, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, শরীরচর্চাবিদ ও পাব পরিচালক পর্যন্ত।
এ ঘটনায় এনডিপিএস আইনের অধীনে মামলা রুজু করে সূর্য অন্নামানেনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে এবং ইএগল বাহিনী মাদক লেনদেনের আর্থিক উৎস, কুরিয়ার নেটওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট পাবগুলোর ভূমিকা খতিয়ে দেখছে।
এই অভিযান শহুরে মাদক চক্রের ভয়াবহ বাস্তবতা উন্মোচন করেছে, যেখানে শিক্ষিত তরুণ, প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেন ও বিলাসী জীবনধারার মোড়কে বিস্তৃত হচ্ছে মাদক সেবন ও পাচার।