Home সারাদেশ একসঙ্গে চার পুত্র সন্তানের জন্ম: ব্যতিক্রমী আনন্দঘন মুহূর্ত

একসঙ্গে চার পুত্র সন্তানের জন্ম: ব্যতিক্রমী আনন্দঘন মুহূর্ত

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বগুড়া: দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাহারপুকুর গ্রামে একসঙ্গে চার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জান্নাতি আক্তার জুই (৩৫)। গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এই চার নবজাতকের জন্ম হয়। বর্তমানে মা ও চার নবজাতকই সুস্থ রয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

সন্তানদের নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ বিন শরিফুল, আহম্মেদ বিন শরিফুল, ওমর বিন শরিফুল এবং রহমান বিন শরিফুল। নবজাতকদের পিতা শরিফুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত, এ সুসংবাদ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

জান্নাতি আক্তার জানান, গত বছর তিনি স্বামীর সাথে সৌদিতে ওমরাহ পালন করতে যান। সেখান থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা হন। শুক্রবার বিকেলে প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলভাবে চার সন্তানের জন্ম দেন টিএমএসএস মেডিকেলের প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ারা খাতুনের নেতৃত্বাধীন চিকিৎসক দল।

হাসপাতালের উপনির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান জানান, “এই ধরণের বহুসন্তান জন্ম সাধারণত জটিলতাপূর্ণ হলেও মা ও নবজাতকরা এখন সুস্থ রয়েছেন। আমরা তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় এলাকায় জান্নাতি আক্তারের একসঙ্গে চার সন্তান জন্মের খবরে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
অনেকেই মিষ্টিমুখ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ধর্মীয় আবহে সন্তানদের সৌদি আরবে ওমরাহ পালনকালে গর্ভধারণের স্মৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করে অনেকে এটিকে বিশেষ আশীর্বাদ হিসেবেও দেখছেনবর্তমানে মা ও চার সন্তান সুস্থ থাকলেও চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, নবজাতকদের আরও কিছুদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য, যাতে ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শারীরিক মানদণ্ড ঠিকমতো অনুসরণ করা


বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম

চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একসঙ্গে চার সন্তানের জন্মকে বলা হয় কোয়াড্রুপলেট (Quadruplets)। এটি একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে কোয়াড্রুপলেট জন্মের সম্ভাবনা প্রতি ৭ লক্ষ গর্ভধারণে মাত্র ১ বার ঘটে। তবে আইভিএফ (In Vitro Fertilization) বা অন্যান্য চিকিৎসা-সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে বহুসন্তান জন্মের হার কিছুটা বেড়েছে।

কোয়াড্রুপলেট গর্ভাবস্থায় সাধারণত কিছু বাড়তি জটিলতার আশঙ্কা থাকে, যেমন প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি (অকাল প্রসব): চার সন্তান একসঙ্গে বহন করায় মাতৃগর্ভের চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে ৩২ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ কোয়াড্রুপলেট ডেলিভারি হয়।

কম ওজনের নবজাতক: প্রতিটি শিশুর জন্মের সময় গড় ওজন সাধারণত ১.৫ থেকে ২ কেজির মধ্যে থাকে।

মাতৃ-জটিলতা: যেমন উচ্চ রক্তচাপ, গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে বর্তমানে কোয়াড্রুপলেট নবজাতকদের বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশন, নবজাতক ইনটেনসিভ কেয়ার (NICU), এবং উন্নত পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি — সব মিলে এই ধরনের সফল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।

  • বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুসন্তান জন্মের ক্ষেত্রে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারিভাবে নানারকম বিশেষ সুবিধাও চালু আছে, যেমন অর্থনৈতিক সহায়তা বা চিকিৎসা খরচের ভর্তুকি।