হেলথ ডেস্ক: মানুষের স্বাভাবিক আচরণে অন্যের অনুমতি ছাড়া জিনিস নেওয়া সাধারণত সামাজিকভাবে নিন্দনীয় এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ না হয়ে বরং এক ধরনের মানসিক ব্যাধির ফল হতে পারে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা একে বলেন ক্লেপ্টোম্যানিয়া।
ক্লেপ্টোম্যানিয়া কী?
ক্লেপ্টোম্যানিয়া হলো এক ধরনের Impulse Control Disorder (আকস্মিক তাড়না নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা), যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি অপ্রয়োজনীয় জিনিসও চুরি করার প্রবল তাগিদ অনুভব করেন। বিষয়টি সচেতনভাবে ‘লাভের জন্য’ বা ‘প্রয়োজন মেটানোর জন্য’ করা হয় না, বরং এক ধরনের মানসিক চাপ ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে হয়ে থাকে।
লক্ষণ
- অন্যের জিনিস দেখলে প্রবলভাবে নেওয়ার ইচ্ছা হওয়া
- প্রয়োজন না থাকলেও গোপনে জিনিস নিয়ে রাখা
- চুরি করার আগে মানসিক উত্তেজনা অনুভব করা
- জিনিস নেওয়ার পর স্বস্তি বা আনন্দ অনুভব করা
- পরে অপরাধবোধ বা লজ্জা থাকা সত্ত্বেও আবারও একই কাজ করা
কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লেপ্টোম্যানিয়ার সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতা
- অতীতের মানসিক আঘাত বা শৈশবের ট্রমা
- বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা অন্যান্য মানসিক রোগের সহ-উপস্থিতি
চিকিৎসা
ক্লেপ্টোম্যানিয়া চিকিৎসাযোগ্য, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যাটি স্বীকার করা ও সাহায্য নিতে আগ্রহী হওয়া জরুরি। চিকিৎসা সাধারণত অন্তর্ভুক্ত করে:
- কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) – আচরণ নিয়ন্ত্রণ শেখানো
- ঔষধ – সেরোটোনিন রিইউপটেক ইনহিবিটরস (SSRIs) বা অন্যান্য মানসিক ওষুধ
- সাপোর্ট গ্রুপ – অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি ও সহায়তা পাওয়া
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি কারও মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যায়—বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে—তাহলে এটিকে ‘খারাপ স্বভাব’ ভেবে অবহেলা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা শুরু হলে রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।