বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: গত এক দশকে শুধু ভারতেই ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে ২০০-এর বেশি হাতি। বিশেষ করে আসামের হোজাই এবং পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার সেকশনটি এখন হাতির জন্য ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নিয়েও। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সমাধানে এখন আশার আলো দেখাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত আধুনিক প্রযুক্তি—‘গজরাজ সিস্টেম’।
কী এই গজরাজ সিস্টেম?
গজরাজ সিস্টেম হলো একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ । এটি মূলত রেললাইনের পাশে মাটির নিচে থাকা অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে কাজ করে। হাতি যখন রেললাইনের ২০০ মিটারের মধ্যে চলে আসে, তখন তাদের পায়ের চাপের ফলে সৃষ্ট সূক্ষ্ম কম্পন এই সেন্সরগুলো শনাক্ত করতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দ্রুত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করে যে এটি হাতির চলাচল। নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটবর্তী স্টেশন মাস্টার, লোকোমোটিভ চালক এবং বন বিভাগকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়। ফলে চালক দ্রুত ব্রেক কষে দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন।
ভারতের অভিজ্ঞতা: ৯৯ শতাংশ সাফল্য
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং আসামের কিছু অংশে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি চালুর পর হাতির মৃত্যু প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাতিপ্রবণ রেলপথে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। গতকাল হোজাইয়ের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এই সিস্টেমের গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও কক্সবাজার রেলপথ
বাংলাদেশের কক্সবাজার রেলপথটি চুনতি এবং ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় পরিবেশবাদীরা শুরু থেকেই শঙ্কিত ছিলেন। ইতিমধ্যে এই পথেও হাতির মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই রেলপথে কিছু ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ ও ‘আন্ডারপাস’ নির্মাণ করা হয়েছে, তবে গজরাজ সিস্টেমের মতো এআই প্রযুক্তি যুক্ত করা গেলে বন ও রেলের মধ্যে একটি আধুনিক সমন্বয় তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার হাতি রক্ষায় ভারতের এই সফল মডেল বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা জরুরি।
বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী রক্ষায় নতুন দিগন্ত
শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোও এখন ভারতের এই ‘গজরাজ সিস্টেম’-এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে কীভাবে উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়, এটি তার একটি অনন্য উদাহরণ।
পরিবেশবিদদের মতে, কেবল আন্ডারপাস বা ওভারপাস দিয়ে হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, কারণ হাতিরা তাদের বিচরণপথ পরিবর্তন করে। তাই গজরাজ সিস্টেমের মতো ‘রিয়েল-টাইম’ মনিটরিং ব্যবস্থাপনাই পারে রেলপথে এই নীরব নিধন বন্ধ করতে।
একনজরে গজরাজ সিস্টেম:
- প্রযুক্তি: অপটিক্যাল ফাইবার সেন্সর ও এআই।
- ক্ষমতা: ২০০ মিটার দূর থেকে হাতির উপস্থিতি শনাক্তকরণ।
- সুবিধা: কুয়াশা বা অন্ধকারেও নিখুঁতভাবে কাজ করে।
- সাফল্য: ভারত-ভুটান সীমান্ত ও আসামের বনাঞ্চলে দারুণ কার্যকর প্রমাণিত।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










