আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান পুলিশের
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার গভীর রাতে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা না গেলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম জানান, গভীর রাতে কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ওই গ্রামের একটি খামার থেকে গরু চুরির চেষ্টা করে বলে স্থানীয়রা সন্দেহ করে। খবর পেয়ে গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নিহতরা সংঘবদ্ধ গরু চোর দলের সদস্য হতে পারেন। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে উত্তেজনা না ছড়ায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “রাতে গ্রামে কিছু লোক ঢুকে গরু চুরির চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাদের ধরে ফেলে। পরে উত্তেজিত জনতা মারধর করে ফেলে।” তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “গণপিটুনি কখনোই সমাধান নয়। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আদালত করবে, জনগণ নয়। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
পুলিশ প্রশাসন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অপরাধ প্রতিরোধের নামে গণপিটুনি কোনোভাবেই ন্যায্য হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে অপরাধের বিচার না হয়ে বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও বিস্তৃত হয়।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “যে কোনো অপরাধের বিচার হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, কোনো অপরাধী সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পুলিশে দিন, কিন্তু নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না।”
এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও প্রাথমিক প্রমাণ সংগ্রহ করছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্তে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও কাজ করছে।
মানবাধিকারকর্মীদের মন্তব্য:
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জেলা প্রতিনিধি জানান, “গণপিটুনিতে মৃত্যু একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এসব ঘটনায় কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, কোনো অপরাধ বা সন্দেহের ঘটনায় নিজে বিচার না করে পুলিশকে খবর দিতে।
সংক্ষিপ্ত বার্তা:
গণপিটুনি নয়, আইনের আশ্রয় নিন। অপরাধের বিচার আদালত করবে, উত্তেজনা নয় শান্তিই হোক সমাজের শক্তি।








