আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে। রোববার রাতভর চলা বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উভয় দেশে বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালালে ইরানও পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন জ্বালানি ও সামরিক স্থাপনায়।
শুক্রবার শুরু হওয়া ইসরায়েলের অপারেশন কার্যত ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। তেহরান এই আক্রমণকে ‘উসকানিমূলক যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে জবাব দিতে শুরু করে শনিবার গভীর রাত থেকে।
ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী তেহরানে একটি ১৪ তলা ভবন ধসে পড়ে, যেখানে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৯ জন শিশু। এ পর্যন্ত ইরানে ১৪০ জন এবং ইসরায়েলে ৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও তিন শতাধিক।
রোববার ভোররাতে ইরান হামলা শুরু করলে জেরুজালেম ও হাইফায় লাখো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে তেলআবিবের উপকণ্ঠ বাট ইয়াম শহরের একটি আটতলা ভবন ধসে পড়ে, যেখানে এখনও ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
গ্যাসক্ষেত্রে হামলা ও বৈশ্বিক উদ্বেগ
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এর একটি ইউনিটে আগুন ধরে যায়। এতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ১২ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের, যা ইরানের মোট উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য অংশ। ইরান এই গ্যাস দেশীয় চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করে, কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা গ্যাস রপ্তানি করতে পারে না।
ইরানের এই গ্যাসক্ষেত্র কাতারের ‘নর্থ ফিল্ড’-এর সঙ্গে যুক্ত। কাতার বিশ্ববাজারে এলএনজি রপ্তানিতে অন্যতম প্রধান দেশ, ফলে হামলার অভিঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সরবরাহ ও মূল্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। শুক্রবারই তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে প্রায় ৯ শতাংশ।
পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত, উত্তেজনা তুঙ্গে
ইসরায়েলের দাবিমতে, তাদের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “বছরের পর বছর পিছিয়ে গেছে।” তবে তেহরান বরাবরের মতোই দাবি করছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, ইরান পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে রোববার ওমানে পারমাণবিক আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘যখন আমাদের ওপর এমন নৃশংস হামলা চলছে, তখন কোনো আলোচনার অবকাশ নেই।’
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বিটসেলেম সতর্ক করে বলেছে, কূটনৈতিক সম্ভাবনা ব্যবহার না করে ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।
উপসাগর সংকটে: হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি
ইরানের এক জেনারেল শনিবার বলেন, তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করছে। উল্লেখ্য, এই প্রণালী দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল সরবরাহ হয়। প্রণালীটি বন্ধ হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ইসরায়েল সতর্ক করে বলেছে, তাদের অভিযান আরও কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাদের শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। অন্যদিকে, ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সাহায্য করে, তবে তাদের সামরিক ঘাঁটিও হামলার লক্ষ্য হবে।