Home শিপিং নাব্যতা হারাচ্ছে নদীপথ চাঁদপুরের বাণিজ্যে ধীরগতি

নাব্যতা হারাচ্ছে নদীপথ চাঁদপুরের বাণিজ্যে ধীরগতি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চাঁদপুর: পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত চাঁদপুর বহুদিন ধরে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য চাঁদপুর ছিল স্বাভাবিক নৌরুটের প্রধান সংযোগস্থল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদীপথ সংকুচিত হওয়া, ড্রেজিংয়ের অভাব, জেটির নিরাপত্তাহীনতা এবং বন্দর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা পুরো খাতকে চাপে ফেলে দিয়েছে।

চাঁদপুরের প্রধান নৌরুটগুলোর গভীরতা ক্রমেই কমছে। নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে অনেক পণ্যবাহী নৌযান আগের মতো চলাচল করতে পারছে না। বর্ষা মৌসুমে নদীর স্রোত বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গিয়ে নদীর তলদেশে চর জেগে ওঠে। এতে বড় মালবাহী নৌযানগুলোকে বিকল্প দীর্ঘ রুট নিতে হয়, ফলে পরিবহন সময় ও খরচ দুটোই বাড়ে। স্থানীয় নৌপরিবহন মালিকদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় ড্রেজিং না হওয়ায় বাণিজ্যিক নৌপরিবহন ক্রমেই ঝুঁকিতে পড়ছে।

বন্দর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নৌ-বাণিজ্যের আরেকটি বড় বাধা। চাঁদপুর বড়স্টেশন লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জেটিতে যাত্রী এবং পণ্য উভয়ের জন্য মানসম্মত নোঙর, আধুনিক স্থাপনা, শৃঙ্খলাবদ্ধ লোডিং-আনলোডিং ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। অনেক পুরনো জেটির কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে নৌযান নোঙর করতে হয়। বন্দরের ভেতরে যথাযথ নজরদারি ব্যবস্থাও নেই বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

মালবাহী নৌযান মালিকরা বলছেন, নদীপথের অনিশ্চয়তার কারণে পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। আগে একদিনে যে পথ অতিক্রম করা যেত, এখন তা নিতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই দিন। জ্বালানির বাড়তি খরচও সরাসরি পরিবহন খাতে চাপ ফেলছে। অনেক মালবাহী নৌযান বাধ্য হয়ে সীমিত কার্গো পরিবহন করছে, ফলে বাণিজ্যের গতি ধীর হয়ে যায়।

নিরাপত্তাহীন জেটি ও অবকাঠামোর কারণে পণ্য ওঠানামা নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো নেই, মালামাল ওঠানোর জন্য আধুনিক ক্রেন বা লোডার নেই, এমনকি নদীর পানির উচ্চতা পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করতে সক্ষম ভাসমান জেটিও সীমিত। এতে পণ্য পরিবহনে ক্ষতি ও লস বাড়ে, যা ব্যবসায়ীদের হতাশ করছে।

চাঁদপুর বন্দরকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে নদীপথে বাণিজ্য জমজমাট থাকলেও বর্তমান অবস্থা স্থবিরতার দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী চেম্বার অব কমার্সের নেতারা মনে করেন, নিয়মিত ড্রেজিং, আধুনিক জেটি নির্মাণ, বন্দর ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন এবং নিরাপত্তা জোরদার করা গেলে চাঁদপুর আবার তার পুরনো বাণিজ্যিক গতি ফিরে পাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদপুরের নৌ-বাণিজ্য শুধু স্থানীয় অর্থনীতিই নয়, দেশের সামগ্রিক পণ্য পরিবহন ব্যয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সময়মতো উদ্যোগ না নিলে চাঁদপুরের নদীপথ একসময় অচল হয়ে পড়তে পারে, যা দক্ষিণ–মধ্যাঞ্চলের বাণিজ্যচক্রে বড় প্রভাব ফেলবে।

চাঁদপুরবাসীর আশা, সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এ জেলার নদীপথ আবার প্রাণ ফিরে পাবে এবং বন্দর হবে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও কার্যকর বাণিজ্যকেন্দ্র।