বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে শরীয়তপুর থেকে যাওয়া যাত্রীবাহী পরিবহন ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’-এর বাসগুলোর ওপর চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা পরিচয়ধারী ফাহিম নামে একজনের বিরুদ্ধে। মালিক সমিতির অভিযোগ: চাঁদা হিসেবে ৫ কোটি টাকা না দেয়ায় চলতি সপ্তাহেই অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয়, শ্রমিকদের মারধর করা হয়, এমনকি বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার সকাল ১০টায় শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে পরিবহন মালিক–শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ী এলাকার প্রভাবশালী যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম প্রথমে প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, পরে এককালীন ৫ কোটি টাকার চাপ তৈরি করেন। চাঁদা না দেয়ায় টোকাই ব্যবহার করে গাড়ি ভাঙচুর, শ্রমিকদের মারধর এবং চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

পরিবহন চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বাসে হামলা হয়, মারধর করে। এমন আতঙ্কে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছি। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি।”
বাস শ্রমিক নয়ন ব্যাপারী জানান, “হঠাৎ হামলা চালিয়ে বাসের গ্লাস ভাঙে, আমাদের মারধর করে। ভয়েই রুটে গাড়ি চালাতে পারছি না।”
বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফারুক তালুকদার বলেন, “ওই যুবদল নেতা আগেই মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা চাঁদা নিত। এখন পাঁচ কোটি টাকা দাবি করছে। আমরা তা মানিনি, তাই গাড়িতে হামলা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা অভিযোগ দিয়েছি।”
এদিকে অভিযুক্ত যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের গাড়ির রুটপারমিট থাকা সত্ত্বেও শরীয়তপুর মালিক সমিতি আমাদের গাড়িকে চলতে দিচ্ছে না। তারা নিজেরাই অবৈধ কাজ করছে, এখন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। আমি চাঁদা দাবি করিনি, প্রমাণ হলে আইনি শাস্তি মাথা পেতে নেব।”
ঘটনার বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস যাত্রাবাড়ীতে ঢুকতে পারছে না। আমরা ডিএমপির সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সরকার কি তাহলে চাঁদাবাজদের কাছে পরাজিত? শরীয়তপুরবাসী যদি যাত্রাবাড়ীতে জড়ো হয়, তখন কী হবে?”
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “হাজার হাজার যাত্রী দাঁড়িয়ে, শিশু-বৃদ্ধ সবার ভোগান্তি। অথচ একজনের চাঁদাবাজির কারণেই থমকে গেছে পরিবহন।”
বর্তমানে যাত্রাবাড়ীতে বাস না গিয়ে বিকল্প রুটে ধোলাইপাড় হয়ে বাসগুলো চলতে বাধ্য হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সময় ও খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাস মালিক–শ্রমিকদের আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।