Home অন্যান্য মোবাইলেই খুলে গেল রুমার নতুন জীবন

মোবাইলেই খুলে গেল রুমার নতুন জীবন

ছবি: এআই

চাকরি খোঁজা, জীবন গড়া

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নরসিংদী: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার এক সাধারণ গ্রামে জন্ম রুমা আক্তারের। খুব বেশি দূর পড়াশোনা হয়নি। নবম শ্রেণি পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেতে হয়। কারণ, বাবা-মা তখন মনে করতেন—মেয়ে মানুষকে বইয়ের পেছনে সময় নষ্ট না করে সংসারেই মনোযোগী হতে হবে। আঠারো বছর বয়সেই বিয়ে। স্বামী মো. শহীদুল ইসলাম একটি স্থানীয় মুদি দোকানে কাজ করতেন, আয় ছিল অল্প। সেই টাকায় তিন বেলা ঠিকমতো খাওয়াই হয়ে উঠত দুষ্কর।

বিয়ের দুই বছরের মাথায় রুমার প্রথম সন্তান হয়। আর তার পরের বছরেই দ্বিতীয় সন্তান আসে কোলজুড়ে। সংসারের চাপ, বাচ্চার যত্ন, অভাব সব মিলিয়ে রুমা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। একসময় মনে হতো, তিনি যেন শুধু রান্না আর কাপড় ধোয়ার জন্যই বেঁচে আছেন।

একদিন পাশের বাড়ির ভাবি বললেন “রুমা, তোমার হাতের মসলা তো খুব ভালো হয়, এগুলো যদি বিক্রি করতে পারতা…” সেই কথায় যেন চেতন ফিরল রুমার। ভেতরে যে কিছু একটা করতে চান, সেটা তো তিনি সবসময়ই জানতেন, শুধু জানতেন না কিভাবে শুরু করবেন।

তখনো নিজের মোবাইল ছিল না, স্বামীর ফোনে ইন্টারনেট চালু করতেন রাতে সবার ঘুমানোর পর। ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে দেখতেন, কীভাবে ঘরে তৈরি পণ্য বিক্রি করা যায়, ফেসবুক পেইজ কীভাবে খোলা হয়, ছবি তোলার নিয়ম কী। শুরুটা ছিল নিঃশব্দ, আত্মবিশ্বাসে ভরা নয় বরং লাজুক ও অনিশ্চিত।

তিনি একদিন সাহস করে এক বালতি নারিকেল থেকে তেল বের করলেন, সেদিনই নিজের হাতে লেখা লেবেল লাগিয়ে একটি ছবি তুলে পোস্ট দিলেন নিজের নতুন ফেসবুক পেইজে নাম রাখলেন “রুমার ঘরোয়া পণ্য”।

প্রথম অর্ডার এল স্কুল জীবনের এক বান্ধবীর কাছ থেকে দুই কেজি মরিচের গুঁড়া। তার পরপরই আরেকজন নক করল। আবার কেউ প্রশ্ন করল “তোমার নারিকেল তেলটা কতটা বিশুদ্ধ?” তখনই রুমা বুঝলেন, শুধু পণ্য নয়, বিশ্বাস গড়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি দিনে রান্না, কাপড় ধোয়া, বাচ্চা সামলানোর মাঝখানে একটু একটু করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসা। রাত হলেই সময় দিতেন ফেসবুক পোস্ট তৈরি, কাস্টমারের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, মোড়ক বানানো, ডেলিভারির জন্য পণ্য গুছিয়ে রাখা। তার শ্বশুরবাড়ির সবাই বিষয়টি নিয়ে প্রথমে সন্দিহান ছিলেন, কেউ কেউ হাসাহাসিও করতেন। কিন্তু সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

আজ তার হাতে নিয়মিত তৈরি হয় ৮ থেকে ১০ রকমের ঘরোয়া পণ্য গুঁড়ো মসলা, নারিকেল তেল, শুকনো আচার, ধান ভাঙানো চাল। স্থানীয় এক কুরিয়ার অফিসের মাধ্যমে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায় তার পণ্য। ফেসবুক পেইজে অনুসারীর সংখ্যা এখন তিন হাজার ছাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, “মেয়ে মানেই শুধু চুলা ধোঁয়ার ভিতর আটকে থাকতে হবে এই ধারণা আমি বদলাতে পেরেছি। আমি এখন শুধু মা নই, আমি আয়ও করি, সংসারে হাতও বাড়াই। আমার সন্তানেরা এখন জানে, তাদের মা ঘরে বসেই কাজ করে।”

আপনার পরিচিত কোনো নারী বা আত্মীয় এমনভাবে নিজের জীবন গড়েছেন কি?
তাঁর গল্প আমাদের জানাতে পারেন।
এই প্রতিবেদন ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
আরও এমন বাস্তব গল্প পেতে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪ ডটকমে।