Home আন্তর্জাতিক চালু হলো মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর চালকবিহীন ট্রেন

চালু হলো মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর চালকবিহীন ট্রেন

ছবি সংগৃহীত

 আঞ্চলিক সংযোগে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
আনোয়ার আহমেদ, কুয়ালালামপুর:  মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে যাতায়াত সহজ করতে চালু হলো ‘চালকবিহীন ট্রেন’ সেবা। সোমবার সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই অটোনোমাস ট্রেন। এট জোহর বারু ও সিঙ্গাপুরের উডল্যান্ডস উত্তর স্টেশনের মধ্যে চলাচল করবে।

ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী পরিদর্শনে মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্থনি লোক এবং সিঙ্গাপুরের পরিবহনমন্ত্রী (ভারপ্রাপ্ত) চি হং তাট উপস্থিত ছিলেন। নতুন এই রেলসেবা চালু হচ্ছে ‘Rapid Transit System (RTS) Link’ প্রকল্পের আওতায়, যা দু’দেশের মধ্যে চলাচলের সময় ও ভোগান্তি কমাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রেন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো

চালকবিহীন ট্রেনগুলো তৈরি করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান CRRC Zhuzhou Locomotive Co. Ltd। প্রতিটি ট্রেন সেটে রয়েছে চারটি কোচ, যা ঘণ্টায় প্রায় ১০,০০০ যাত্রী বহন করতে পারবে।
এই ট্রেন পুরোপুরি অটোনোমাস, অর্থাৎ এতে কোনও চালক থাকবে না। নিয়ন্ত্রণ, সিগন্যালিং এবং নিরাপত্তা—সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে।

ট্রেনটিতে রয়েছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্ম-স্ক্রীন দরজা, অগ্নি সতর্কতা ও যাত্রী সহায়তা প্রযুক্তি। চলাচলের সময় ট্রেনটি ৫ মিনিটের মধ্যে মালয়েশিয়ার বুকে চাগার থেকে সিঙ্গাপুরের উডল্যান্ডস পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

পরীক্ষা ও সময়সূচি

ট্রেনের প্রথম সেটটি এপ্রিলে সিঙ্গাপুরের রেল টেস্ট সেন্টারে পৌঁছায়। বর্তমানে সেখানে এর Offsite System Integration Testing (OSIT) চলছে। সব ট্রেন সেটের পরীক্ষা শেষ হলে এগুলো মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যের বাটু গাজাহ ডিপোতে পাঠানো হবে চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য।

সরকার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যাত্রীবাহী সেবা শুরুর লক্ষ্যে কাজ এগোচ্ছে। শুরুতে ৮টি ট্রেন চলাচল করবে, পর্যায়ক্রমে আরও ট্রেন সংযুক্ত করা হবে।

 অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব

এই প্রকল্পকে শুধু একটি পরিবহন উদ্যোগ নয়, বরং মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর সম্পর্কের একটি “স্ট্র্যাটেজিক সিম্বল” হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩,৫ লাখ মানুষ এই দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন, যা সকাল-বিকালের সময়ে সীমান্তে যানজটের অন্যতম কারণ। RTS Link সেই চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া যাত্রীদের ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে বারবার থামতে হবে না—একবারই চেক করে দুই দেশেই চলাচল সম্ভব হবে, যা অভূতপূর্ব।

 আরেকটি অগ্রগতি:

চালকবিহীন প্রযুক্তিতে মালয়েশিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল ১ জুলাই কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন এয়ারোট্রেন চালুর মাধ্যমে।
Alstom নির্মিত এই Automated People Mover (APM) প্রতিটি ট্রেনে ২৭০ যাত্রী বহন করতে পারবে। এটি মূলত টার্মিনাল ১ ও ২-এর মধ্যে যাত্রী পরিবহনের জন্য তৈরি।

মালয়েশিয়ায় চালু হওয়া এই চালকবিহীন ট্রেন প্রকল্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের দিকনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে।
যাত্রীবান্ধব প্রযুক্তি, আধুনিক অবকাঠামো ও পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির এই উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে সংহতি, সময় সাশ্রয় এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি আনবে এটাই এখন আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা।