Home রাজনীতি রাজনীতির ‘ফটো কালচার’ নিয়ে ভাবনার সময়

রাজনীতির ‘ফটো কালচার’ নিয়ে ভাবনার সময়

মন্তব্য প্রতিবেদন

ঢাকা: দেশের রাজনীতিতে এখন যেন এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ‘ছবির রাজনীতি’। বড় কোনো নেতা এলেই, তাঁকে ঘিরে প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে আগে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে ‘নেতার ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে তুলে ধরার প্রতিযোগিতা চলে। অথচ বাস্তবে সেই নেতা হয়তো তাকে ভালো করে চিনেনই না, নামটাও জানেন না।

এই ‘ফটো কালচার’ এখন আর কেবল হাস্যকর নয়, বরং অনেক সময় ভয়ংকর রূপও নিচ্ছে। কারণ, দেখা যাচ্ছে এই ছবিতোলার ভিড়ে স্থান করে নিচ্ছে নানা ধরনের অপরাধী, এমনকি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও খুনের মামলার আসামীরাও। তারা বড় নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, তারপর সেই ছবি ব্যবহার করে এলাকায় নিজেদের ‘নেতার লোক’ হিসেবে পরিচিত করে।

রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু রাজনৈতিক পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি সমাজের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। কারণ, যখন একজন চিহ্নিত অপরাধী একজন জাতীয় নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে এবং সেটা প্রচার করে, তখন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তারা ধরে নেয়, সে হয়তো ক্ষমতাবানদের সুরক্ষা পাচ্ছে।

বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, পরবর্তীতে সেই ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে বড় নেতাকেই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তখন সেই নেতা বা তার দপ্তর থেকে বিবৃতি দিতে হয় যে, “আমরা তাকে চিনি না, ছবি তোলার সময় জানতাম না যে সে একজন মামলার আসামি।”

একজন জেলা পর্যায়ের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এখন বড় নেতা কোনো অনুষ্ঠানে আসলে সিকিউরিটির চেয়ে ছবি তোলার ভিড় বেশি হয়। সবাই শুধু একটা ছবি চায়। সেটা হলেই তারা পোস্টার-ফ্লেক্সে ছাপিয়ে এলাকায় নিজেদের নেতা বানিয়ে ফেলে।”

জনগণের মধ্যে এই প্রবণতা নিয়ে বিরক্তি বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ এই ভুয়া নেতৃত্ব সংস্কৃতি দেখে হতাশ। অনেকেই মনে করেন, একজন রাজনীতিবিদের পরিচয় আসা উচিত তার সেবামূলক কর্মকাণ্ড থেকে, বড় কারও পাশে দাঁড়ানোর ছবি থেকে নয়।

রাজনৈতিক সমাজ বিশ্লেষক ড. তানভীর আহমেদ বলেন, “ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেকে নেতা প্রমাণ করার প্রবণতা রাজনৈতিক অঙ্গনের মূল চেতনার বিরোধী। এটা আত্মপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়, তাও আবার অপরাধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।”

রাজনীতির এই ‘ছবিবাজি’ সংস্কৃতি শেষ পর্যন্ত কাদের উপকারে আসছে? প্রশ্ন উঠছে, নেতাদের সহকারীরা কেন এসব অপরাধীদের সরিয়ে দেন না? কেন ছবি তোলার আগে যাচাই হয় না কারা আসছে?

এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো সহজ নয়, কিন্তু সময় এসেছে গভীরভাবে ভাবার। কারণ, রাজনীতি যদি সত্যিকারভাবে জনগণের কল্যাণের জন্য হয়, তাহলে সেখানে নেতা হওয়ার শর্ত হওয়া উচিত জনগণের ভালোবাসা ও সেবার ইতিহাস—not একটা ভাইরাল ছবি।


পাঠকের প্রতি আহ্বান:
📢 আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? এলাকায় ‘ছবির নেতা’ দেখা গেছে কি?
📲 প্রতিবেদনটি শেয়ার করে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করুন।
📌 বিজনেসটুডে২৪.কম-এর সাথেই থাকুন, সমাজ সচেতন প্রতিবেদনের জন্য।