Home চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জমিদারি’ বিতর্ক: রাজনীতি, প্রভাব ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জমিদারি’ বিতর্ক: রাজনীতি, প্রভাব ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা

জামায়াত নেতার বক্তব্যে বিক্ষোভ করেছেন চবির শিক্ষার্থীরা। ছবি সংগৃহীত
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আলোচনায় থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলামের দেওয়া ‘জমিদারি’ মন্তব্য আবারও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তেজনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তার বক্তব্যকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত করছে, এখানে কেবল একটি মন্তব্য নয়, বরং দীর্ঘদিনের প্রভাব বিস্তারের লড়াই নতুন করে সামনে চলে এসেছে।
মন্তব্যের পটভূমি

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে এক মতবিনিময় সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা এই এলাকার মালিক। জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেব না।” শিক্ষার্থীদের কাছে এ বক্তব্য ছিল এক ধরনের অপমান ও হুমকি। তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তিগত জমিদারি নয়, বরং জাতীয় সম্পদ। ফলে শুক্রবার রাতে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে নামে।

রাজনীতির ছায়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বরাবরই তীব্র। সব ছাত্র সংগঠন এখানে সক্রিয়। সিরাজুল ইসলামের সভায় ছাত্রশিবিরের নেতা উপস্থিত থাকায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। যদিও শনিবার সকালে ছাত্রশিবির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওই বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, তবু তারা অভিযোগ তুলেছে যে হামলায় ছাত্রদলের ক্যাডাররা জড়িত। অন্যদিকে ছাত্রদল এ অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেছে, তাদের নেতাকর্মীরা উল্টো পরিস্থিতি শান্ত করতে কাজ করেছেন।

রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান শিক্ষার্থীদের বিভক্ত করছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও একাডেমিক পরিবেশের চেয়ে দলীয় প্রভাব বিস্তারই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শ্লোগান ছিল স্পষ্ট—“চবি নিয়ে জমিদারি চলবে না।” এতে বোঝা যায়, তাদের মূল উদ্বেগ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও মর্যাদা। তারা চায় না, স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘নিজস্ব সম্পত্তি’ মনে করে প্রভাব বিস্তার করুক। শিক্ষার্থীদের এই ক্ষোভ আংশিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলা দখলদার রাজনীতির প্রতিফলন।

প্রশাসনের নীরবতা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা। এত বড় উত্তেজনা সৃষ্টির পরও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে। অনেকে মনে করছেন, প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে, যাতে কোনো পক্ষকে বিরক্ত করতে না হয়। কিন্তু এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে অরক্ষিত মনে করছেন।

নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে বহু সংঘর্ষ হয়েছে, যেখানে প্রাণহানিও ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, ‘জমিদারি’ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আবারও সহিংসতা তৈরি হতে পারে। যদি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে এবং প্রশাসন নীরব থাকে, তবে উত্তেজনা আরও বাড়বে।

এ ঘটনার মূল শিক্ষা হলো—বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক বা স্থানীয় প্রভাবের জায়গা নয়, এটি দেশের সম্পদ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ। প্রশাসনকে দ্রুত পরিষ্কার অবস্থান নিতে হবে এবং রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।