Home Third Lead জরেজুল-শামীমা জুটির ভয়াবহ ফাঁদে ২৬ টুকরো আশরাফুল

জরেজুল-শামীমা জুটির ভয়াবহ ফাঁদে ২৬ টুকরো আশরাফুল

আশরাফুল। ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি নীল ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২) হত্যার ঘটনায় রীতিমতো হৃদয়বিদারক সব তথ্য উঠে আসছে তদন্তে। ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের একদিন পর শুক্রবার পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আশরাফুলের বাল্যবন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তাঁর প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জরেজুলকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে এবং র‌্যাব–৩ রাজধানী থেকে শামীমাকে আলামতসহ আটক করে।

ডিবি ও র‌্যাবের সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে ড্রামের ভেতর থেকে ২৬ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের পরই ছায়া তদন্ত শুরু হয়। আঙুলের ছাপ থেকে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুতই বেরিয়ে আসে পরকীয়ার জটিল সম্পর্ক, সন্দেহ, প্রতিশোধ আর নৃশংসতার বেদনাদায়ক কাহিনি। তদন্তে জানা যায়, দক্ষিণ দনিয়ার একটি ভাড়া বাসায় শ্বাসরোধ ও হাতুড়ির আঘাতে হত্যা করা হয় আশরাফুলকে। এরপর দুদিন ধরে লাশ বাসাতেই রাখা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দা দিয়ে তাঁর মরদেহ ২৬ টুকরায় কেটে দুটি ড্রামে ভরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্টের সামনে ফেলে পালিয়ে যান জরেজুল ও শামীমা।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়া শামীমার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। আর জরেজুলকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম। তাঁর নেতৃত্বেই পুরো মামলার তদারকি চলছে। নাসিরুল জানান, দনিয়ার ভাড়া বাসা থেকে রক্তমাখা হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, রংপুরের একই গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ও জরেজুলের বন্ধুত্ব ছিল শৈশব থেকেই। মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুল তিন বছর আগে ‘বিগো লাইভ’-এ কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রী শামীমা আক্তারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। সেই সম্পর্কের বিষয়টি তিনি বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। পরে আশরাফুলও শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে দুই পুরুষের বন্ধুত্বের জায়গায় জন্ম নেয় তীব্র ঈর্ষা আর প্রতিশোধের বীজ।

২৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে জরেজুল দনিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে শামীমাকে নিয়ে ওঠেন তিনি। গত মঙ্গলবার সেই বাসায় আশরাফুলকে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে শামীমা–আশরাফুলের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জরেজুল। প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে এবং পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন তিনি। হত্যার পর সারা রাত মরদেহ ফেলে রাখা হয়। বুধবার দিনভর পরকীয়ার এই দুই অংশীদার মিলে লাশ টুকরো করার নৃশংস প্রস্তুতি নেন।

মৃত্যুর পরের গল্প আরও শিউরে ওঠার মতো। বুধবার মাঝরাতে দা দিয়ে ২৬ টুকরা করার পর মরদেহ দুটি নীল ড্রামে ভরা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি ভ্যানে তুলে ড্রামগুলো জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে ফেলে রেখে কুমিল্লায় পালিয়ে যান জরেজুল ও শামীমা। পরদিনই তাঁদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা।

এদিকে, নিহত আশরাফুল হকের পরিবার এখন শোক আর অবিশ্বাসের ভারে ভেঙে পড়েছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের ছেলে আশরাফুলের দুই সন্তান—১০ বছরের মেয়ে ও সাত বছরের ছেলে। শুক্রবার সকালে ঢামেক মর্গে মরদেহ গ্রহণে এসে বোন আনজিরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বাবাকে হাসপাতালে রেখে মালয়েশিয়া ফেরত বন্ধু জরেজকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছিলেন আশরাফুল। সেদিনই তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়। এরপর ফোন ধরেন জরেজুল, বলেন আশরাফুল ব্যস্ত আছেন। পরদিনও একই কথা বলেছিলেন তিনি আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগমকে।

স্বজনেরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না, যাকে ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করতেন আশরাফুল, সেই জরেজুলই নৃশংসভাবে তাঁর জীবন শেষ করে দিলেন। পরকীয়ার জেরে ঘটল এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং লাশ টুকরো করার বিভীষিকা—তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই বেরিয়ে আসছে ভয়ংকর বিবরণ।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম। পুলিশের ধারণা, আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে শামীমা ও জরেজুলের জিজ্ঞাসাবাদে। তদন্ত এখনো চলছে।