Home রাজনীতি কোণঠাসা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে টানাপোড়েন

কোণঠাসা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে টানাপোড়েন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রংপুর: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে জাতীয় পার্টি। সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের নানা অপকর্মে পরোক্ষ সহায়তার অভিযোগ তাদের ওপর উঠেছে। ফলত, দল হিসেবে নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলছে বিরোধী মহল। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব, বিশেষত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নতুন করে।

ঈদের আগের রাতে রংপুর শহরের সেনপাড়ায় জিএম কাদেরের ব্যক্তিগত বাসভবন ‘দ্য স্কাই ভিউ’-তে সংঘটিত এক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হামলার সময় বাড়িতে অবস্থান করছিলেন জিএম কাদের নিজেই। তার দাবি, “আমি বিশ্রামে ছিলাম, আচমকা সশস্ত্র লোকজন হামলা চালায়। এ দেশে এখন কেউ নিরাপদ নয়।”

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এই হামলার জন্য ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ কর্মীদের দায়ী করা হয়। তারা অভিযোগ করে, রংপুর প্রেস ক্লাব থেকে একটি মিছিল বের করে ওই ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা সেনপাড়া পৌঁছে নানা স্লোগানের পর হঠাৎ হামলা চালায়। জিএম কাদেরের গাড়ি ও বাড়ির সামনে থাকা মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন শনিবার রংপুরে বিক্ষোভ করে জাতীয় পার্টি এবং দোষীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়।

এ ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব আরিফ আলী ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জাতীয় পার্টির অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও সাজানো নাটক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, রংপুর সফরে জিএম কাদের ‘গণবিরোধী তৎপরতা’ চালিয়েছেন, এবং তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে জাপার কর্মীরাই প্রথমে হামলা চালায়।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন কড়া ভাষায় বলেন, “জাতীয় পার্টি বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিকৃত করেছে। তারা একদিকে বিরোধী দলের সুবিধা নেয়, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতা করে। এ ধরনের দল গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।” এনসিপি নেতা সারজিস আলম আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “জিএম কাদের নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতার অংশীদার হতে চাইতেন। এবার তাদের মুখোশ খুলে গেছে।”

এমন উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি মুখ থুবড়ে পড়ার বদলে পাল্টা লড়াইয়ে নামছে। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এক প্রতিবাদ সভায় বলেন, “দেশের মানুষ আজ নিজেদের ঘরে নিরাপদ নয়। যারা এখন নতুন সরকারে আছেন, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই অস্থির বাংলাদেশ কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মানানসই?”

শনিবার রাতে বরিশাল ও লালমনিরহাটে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জাতীয় পার্টি ক্ষোভ জানায় এবং এনসিপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অন্যের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে দুই পক্ষই।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, “জিএম কাদের একজন অবৈধ মেয়রকে স্বপদে বসাতে রংপুরে এসেছিলেন। এটি আসলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনের চেষ্টা মাত্র।” তারা দাবি করেছেন, জাতীয় পার্টির ‘ছায়াতলে’ ছাত্র আন্দোলনে হামলা হয়েছে এবং এর প্রমাণ ভিডিও ফুটেজে রয়েছে।

এই অস্থিরতার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে—আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনৈতিক নতুন গড়ন তৈরি হলেও পুরনো বিতর্কিত দলগুলোর দায় মুছে যায়নি। জাতীয় পার্টির অতীত ভূমিকা ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন, রাজনৈতিক পরিসরে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।


🔁 প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন
📰 আরও এমন প্রতিবেদন পেতে ভিজিট করুন BusinessToday24.com