Home বিনোদন জাদুর কাঁথা

জাদুর কাঁথা


(একটি বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোককথা)

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক গাঁয়ের শেষপ্রান্তে বাস করত এক দরিদ্র বালিকা, তার নাম ছিল নিতু। তার বাবা-মা মারা গিয়েছিল বহু আগে। নিতু বড় হয়েছিল এক বুড়ি ঠাকুরমার কাছে। ঠাকুরমা তাকে সেলাই-কাঁথা সেলাই শেখাতেন। তাদের একটাই সম্বল ছিল—একটি পুরনো কাঁথা, যার গায়ে লাল, সবুজ, সোনালি সুতোয় বোনা ছিল অদ্ভুত নকশা।

ঠাকুরমা মারা যাওয়ার আগে একদিন বললেন,
“এই কাঁথাটা সাধারন নয় রে নিতু। এটা জাদুর কাঁথা। তুই যদি মন দিয়ে কিছু চাস, কাঁথার ওপর মাথা রেখে সেটা ভাবলেই তা সত্যি হবে। তবে শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের উপকারে চাইলেই সেটা কার্যকর হবে।”

নিতু বিশ্বাস না করলেও কাঁথাটা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। দিন গেল, গাঁয়ে খরা পড়ল, মানুষ না খেয়ে মরতে লাগল। এক রাতে কাঁথার ওপর মাথা রেখে নিতু মনে মনে বলল,
“হে কাঁথা, যদি তোমার মধ্যে সত্যি জাদু থাকে, তবে গাঁয়ের সবাই যেন কাল সকালেই খাবার পায়।”

পরদিন সকালে দেখা গেল—গাঁয়ের মাঠজুড়ে খাদ্যে ভর্তি ঝুড়ি, খেজুর, দুধ, চাল, ডাল, মিষ্টি। সবাই অবাক। নিতু কিছু বলল না, শুধু কাঁথার ভাঁজে ঠাকুরমার ছবি দেখে মুচকি হাসল।

এরপর থেকে নিতু এই জাদুর কাঁথা দিয়ে গোপনে গাঁয়ের মানুষের দুঃখ লাঘব করতে লাগল। কেউ জানতে পারত না, কে করছে এসব উপকার।

একদিন রাজ্যের রানি এল সেই গাঁয়ে। তার ছোট রাজপুত্র ছিল পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। অনেক ওঝা-তান্ত্রিক ব্যর্থ হয়েছে। রানি যখন নিতুর কথা শুনে তার কাছে এল, তখন নিতু কিছু না বলে রাজপুত্রকে সেই কাঁথায় জড়িয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে কাঁথার ওপর হাত রেখে প্রার্থনা করল।

পরদিন দেখা গেল, রাজপুত্র হাঁটছে। সবার চোখে জল। রানির অনুরোধেও নিতু রাজপ্রাসাদে গেল না। কাঁথা তার ঠাকুরমার শেষ উপহার, সে তা মানুষের দুঃখ দূর করতেই ব্যবহার করবে—এটাই তার সিদ্ধান্ত।

এইভাবেই ‘জাদুর কাঁথা’র কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে। বলা হয়, সেসব গাঁয়ে আজও যদি কেউ নিঃস্বার্থ মন নিয়ে প্রার্থনা করে, তবে হয়তো পুরোনো কোনো কাঁথার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা জাদু আবার জেগে ওঠে।


📌 যদি বাংলার এমন লোকগাথা ভালো লেগে থাকে, তাহলে ❤️ লাইক করুন, 🔄 শেয়ার করুন, এবং ✍️ মন্তব্যে লিখুন—আপনার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া রূপকথার নাম!
#রূপকথা #বাংলারগল্প #জাদুর_কাঁথা #লোককাহিনি #রূপকথার_ফিরে_আসা