বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বাগেরহাট: মোংলা বন্দরে প্রথমবারের মতো নোঙর করল বিশালাকৃতির হেভি লিফট জাহাজ ‘এমভি জাম্বো কাইনেটিক’। নেদারল্যান্ডসের পতাকা বহনকারী এই জাহাজটির আগমন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহাজটি মোংলা বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে পৌঁছে। প্রায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লিফটিং প্রযুক্তি সজ্জিত এই ভেসেলটি মূলত বড় প্রকল্পের ভারী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৫২ মিটার লম্বা এবং ২৮ মিটার চওড়া। জাহাজটিতে দুটি ক্রেন রয়েছে, যার প্রত্যেকটির উত্তোলন ক্ষমতা ১৫০০ টন, এবং সম্মিলিতভাবে ৩০০০ টন পর্যন্ত ভারী জিনিস উত্তোলন করতে পারে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘জাম্বো কাইনেটিক’ জাহাজটির আগমন মোংলা বন্দরের ইতিহাসে একটি মাইলফলক ঘটনা। এটি প্রমাণ করে, এখন থেকে আন্তর্জাতিক মানের ভারী পণ্যবাহী জাহাজ গ্রহণে বন্দরটি প্রস্তুত। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট যে, চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়েছে।
বর্তমানে বন্দরটির ড্রেজিং কার্যক্রম, জেটির আধুনিকায়ন এবং পণ্য খালাসের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ভারী পণ্যের খালাসে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি দেশের বড় শিল্প ও অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই মোংলা বন্দরে ৭২৫টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এ সময়ে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ ৩৭ হাজার টন। আগের বছরের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমিয়ে আনার উদ্যোগ হিসেবে মোংলার উন্নয়ন এখন সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায়।
বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মোসাফফা হোসেন বলেন, ‘এই জাহাজটি আমাদের সক্ষমতার একটি প্রতীক। দেশের বৃহৎ প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল প্রভৃতির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও এখন মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আনা সম্ভব হবে।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে তা শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন নয়, দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।