Home আন্তর্জাতিক জার্মানির ডায়েরি: শিক্ষা ও সুযোগ

জার্মানির ডায়েরি: শিক্ষা ও সুযোগ

অরিন্দম বণিক, বার্লিন: েবার্লিনের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা আজ বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা জার্মানির বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই দুই দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে, যা শুধু শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নয়, পরবর্তীতে দুই দেশের জনশক্তি উন্নয়নের জন্যও সুখবর।

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি অনেক দেশে থেকে তুলনামূলক কম, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়। ভারতের এবং বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ, যেখানে শিক্ষার খরচ অনেকটা হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স ও মেডিসিনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে শিক্ষার্থীরা উচ্চমানের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে।

বার্লিনের চারপাশে এখন বহু ভারতীয় ও বাংলাদেশি ছাত্ররাও নিজেদের জন্য সহায়ক কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন। তারা নতুন আসা শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন, শিক্ষাগত পরিবেশ ও সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্লাব ও গ্রুপের মাধ্যমে সাহায্য করেন। এর ফলে, বিদেশে থাকাকালীন শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে সুস্থ এবং আত্মবিশ্বাসী থাকছেন।

শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি গবেষণা ক্ষেত্রে ভারতের ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জার্মানির বিভিন্ন ল্যাব ও ইনস্টিটিউটে কাজ করছেন। বিশেষ করে জার্মানির সরকারিভাবে পরিচালিত ‘ডিএফজে’ (Deutsche Forschungsgemeinschaft) এবং ‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট’ থেকে পাওয়া সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে জড়িত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি দুই দেশের জন্য ভবিষ্যতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া, ‘ইআরএসমাস প্লাস’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভারতের ও বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জার্মানির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক বিনিময় কার্যক্রম চলছে। এতে শিক্ষার্থীরা সেমেস্টার-লম্বা বা শর্ট টার্ম কোর্সের মাধ্যমে জার্মানিতে গিয়ে দক্ষতা অর্জন করছেন। আর এই অভিজ্ঞতা দেশে ফিরে তাদের ক্যারিয়ারে এক বিশাল প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে।

জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও শিক্ষার্থীদের জন্য স্টাইপেন্ড এবং চাকরির সুযোগ বাড়িয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের প্রায়শই ট্যালেন্টশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ক্লিন এনার্জি সেক্টরে। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ বা পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করছেন।

সব মিলিয়ে, জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকদের সম্পর্ক ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির সুযোগ নয়, বরং দুই দেশের প্রযুক্তি ও অর্থনীতির উন্নয়নে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। তাই ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের এই ধারা আরও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

এই প্রবাস জীবনে শিক্ষার্থীরা শুধু বই পড়েন না, বরং দুই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে, যা পারস্পরিক সমঝোতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

  • পরবর্তী পর্বে আমরা জার্মানির শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে আলোকপাত করব, যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের পেশাজীবীদের ভূমিকা কেমন তা বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।