শিপিং ডেস্ক: পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গাদানি জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে শুরু হতে যাচ্ছে এক যুগান্তকারী রূপান্তর। পরিবেশদূষণ ও শ্রমিক-সুরক্ষার দিক বিবেচনায় এক সময়ের বিশ্বখ্যাত এই ইয়ার্ডটি আজ বিশ্বমানের একটি পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় পরিণত হওয়ার পথে। এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তান সরকারের সদ্য অনুমোদিত ১২ বিলিয়ন রুপি (৪২ মিলিয়ন ডলার) বাজেট।
পরিবেশ ও জলবায়ু সংকটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান এই উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জলবায়ু ও নিরাপদ জাহাজ পুনর্ব্যবহার মানদণ্ডে নিজেদের সামঞ্জস্য করতে চাইছে। দেশটির সামুদ্রিক বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ জুনায়েদ আনোয়ার চৌধুরী এক বৈঠকে জানান, এই প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ নয়, বরং জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতকে পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিকভাবে টেকসইভাবে গড়ে তোলা।
দীর্ঘদিন ধরে গাদানি ছিল পরিত্যক্ত ও পুরনো জাহাজ ভাঙার কেন্দ্র। এখান থেকে বছরে প্রায় ১২ লাখ টন লোহা উৎপন্ন হয়, যা দেশের স্টিল সরবরাহ শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক চাপ, পরিবেশদূষণ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই শিল্পে ধস নামে। এখনো যারা এখানে কাজ করেন, তারা দৈনিক মাত্র ৪ ডলারের মতো আয় করেন এবং রঙে থাকা সীসা, অ্যাসবেস্টসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতিনিয়ত।
গাদানির এই নতুন প্রকল্পে শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গড়া হবে একটি ৩০ শয্যার হাসপাতাল, চিকিৎসক ও কর্মীদের আবাসন, শ্রমিকদের জন্য আবাসন কলোনি। এছাড়া তৈরি হবে ৩২ কিলোমিটার রাস্তা, একটি স্কুল, একটি পাবলিক পার্ক ও আধুনিক পানীয়জল সরবরাহ ও শোধনাগার।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান ‘হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশন ফর দ্য সেফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস -এর সদস্য হয়। এর আওতায় গাদানিকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রে রূপান্তরের চাপ তৈরি হয়।
মন্ত্রী চৌধুরী জানিয়েছেন, HKC বাস্তবায়নে একটি স্বচ্ছ ও শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে, যাতে কাজের গতিপ্রকৃতি, স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও পরিবেশমান বজায় থাকে।
পাকিস্তান এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের সম্মুখভাগে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। অনিয়মিত বর্ষা, হিটওয়েভ ও আকস্মিক বন্যার ভয়াবহতায় জনগণকে প্রতিবছর ভুগতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে গাদানির পরিবেশবান্ধব রূপান্তর হতে পারে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত, যেখানে শিল্পোন্নয়ন ও পরিবেশ-সুরক্ষা পাশাপাশি চলে।