বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করুক—এই দাবিতে চট্টগ্রামে নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ যৌথভাবে এক সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নগরীর কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্যারটেক এলাকায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় আইএসডিই বাংলাদেশ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (CLEN) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BWGED)।
প্রতিবাদ সভায় ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, “এডিবি এখন পর্যন্ত ২৮৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪.৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর ৮৩ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে, কিন্তু সৌরবিদ্যুতে মাত্র ২.৫৫ শতাংশ এবং বায়ু শক্তিতে কোনো বিনিয়োগই নেই।”
তিনি আরও বলেন, “এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষেত্রে যেখানে খরচ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, সেখানে সৌরবিদ্যুতে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এডিবির বিনিয়োগ নীতি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়।”
অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর বলেন, খুলনায় এডিবি ১৫০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস টারবাইনকে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্টে উন্নীত করতে ১০৪ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় এই প্রকল্প ঝুঁকির মুখে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রূপসা প্রকল্পের মতো ৮০০ মেগাওয়াটের এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলেও এখনও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি, ফলে এসব প্রকল্প “অচল সম্পদে” পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ক্যাব কর্ণফুলী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ পরিবেশকর্মী সাদিরতুল মুনতাহা বলেন, “বিশ্ব যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এডিবির এমন বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে আরও গভীর করছে।”
অন্যান্য বক্তারা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা শুধু পরিবেশ নয়, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি ও সমাজকেও ক্ষতির মুখে ফেলছে।
আয়োজক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এডিবির আসন্ন ৫৮তম বার্ষিক সভাকে কেন্দ্র করে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এই ধরনের কর্মসূচি আরও বিস্তৃত আকারে চলবে, যাতে জলবায়ু ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সংস্থাগুলো চাপের মুখে আসে।
আলোচনা ও প্রচারাভিযানে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা অংশনেন আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসুচি কর্মকর্তা রইসুল ইসলাম, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট চট্টগ্রামের মেন্টর রাসেল উদ্দীন, যুব ক্যাব কর্নফুলী উপজেলা সভাপতি আরফিন সুমন, যুব গ্রুপের সদস্য জহির উদ্দীন হিমেল, সাজ্জাদ হোসেন রনি, ডলি আক্তার, ইমতিয়াজ হোসেন মিরাজ, সাদিয়া জাহান সিথী, জাহেদুল ইসলাম, মুহিবুল ইসলাম মুহিব প্রমুখ।