মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: পুঁজিবাদের হৃদয় নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নির্বাচনের পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির সমালোচনা করে বলেন, “আমরা কোনো হুমকির কাছে নতি স্বীকার করব না।” ট্রাম্প অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে নিউইয়র্কে রাজ্য প্রতিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর যে হুমকি দিয়েছেন, মামদানির দৃঢ় অবস্থান সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় এবিসি চ্যানেলকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে মেয়র-নির্বাচিত মামদানি বলেন, “ট্রাম্পের হুমকি অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু এটি নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক ভয় প্রদর্শন।” তিনি যুক্তি দেন, “যদি অভিবাসন অভিযান সত্যিই নিরাপত্তার জন্য হতো, তাহলে ট্রাম্প রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত শীর্ষ ১০টি অপরাধপ্রবণ অঙ্গরাজ্যেও একই ব্যবস্থা নিতেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না, কারণ এটি তাঁর দলের রাজনীতি।”
ট্রাম্প এর আগেও ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন ও ইলিনয়েসের মতো ডেমোক্রেটিক ঘরানার অঙ্গরাজ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়েছিলেন, যা তখন ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়োত্তর ভাষণেও মামদানি সরাসরি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “ট্রাম্প, আমি জানি তুমি দেখছো—আমাদের কাউকে স্পর্শ করতে চাইলে, আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।”
অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে কর ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন মামদানি। নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া ধনীদের ওপর কর আরোপের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, “নিউইয়র্কবাসী আমাকে নির্বাচিত করেছে একটি সাশ্রয়ী অর্থনৈতিক জীবন গড়ার জন্য, আর সেই তহবিল আসবে উচ্চ আয়ের নাগরিকদের কাছ থেকেই।”
তিনি জানান, “আমরা নিউইয়র্কের ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট করহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আনব। এই দুটি পদক্ষেপ থেকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পাওয়া সম্ভব হবে।”
মামদানি আরও বলেন, “আমরা সেই দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতি ভাঙতে চাই, যেখানে বিলিয়নিয়াররা কর ফাঁকি দিয়ে সুবিধা ভোগ করে।” তবে বিশ্লেষকদের মতে, কর ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে হলে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ও গভর্নরের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, যা মেয়রের একক ক্ষমতার বাইরে।
নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মুসলিম প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের বহুত্ববাদ ও নাগরিক অধিকারের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।










