মোজাফফর রাহমান বাদল, কুষ্টিয়া: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকর্মের মধ্যে মসজিদগুলো বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কুষ্টিয়া জেলার ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত ঝাউদিয়া শাহী মসজিদও সেই দৃষ্টান্তের এক অপূর্ব নিদর্শন, যা ইতিহাস, স্থাপত্যশিল্প ও সংস্কৃতির দিক থেকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ঝাউদিয়া মসজিদ প্রাচীন সময়ের একটি স্থাপত্য, যা নির্মিত হয় মধ্যযুগে। স্থানীয়দের কাছে এটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়, বরং এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল বা প্রতিষ্ঠাতার নাম সুস্পষ্ট না হলেও লোকমুখে প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, এটি গড়ে উঠেছিল প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো সময়কালে। ঝাউদিয়া গ্রামের জনগোষ্ঠী মসজিদটিকে অত্যন্ত সম্মান দিয়ে দেখেন এবং এটি নিয়েই তাদের নানা উৎসব ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
ঝাউদিয়া মসজিদের স্থাপত্যশৈলী স্থানীয় ঐতিহ্য ও মুসলিম স্থাপত্যের মেলবন্ধন। মসজিদের গঠনকাঠামোতে রয়েছে বাংলার প্রাচীন মসজিদগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যেমন লাল ইটের ব্যবহার, সূক্ষ্ম নকশা, গম্বুজ এবং মিনার। মসজিদের চারপাশে রয়েছে ছোট ছোট মিনারগুলো, যা সম্পূর্ণ মসজিদটিকে এক ধরনের শোভা দেয়। মসজিদের দেয়ালে রয়েছে নানা নকশা ও কারুকার্য যা স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি। বিশেষ করে সিমেট্রিকাল জ্যামিতিক নকশাগুলো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
পর্যটন গুরুত্ব
ঝাউদিয়া মসজিদ কেবল ধর্মীয় পর্যটকদের জন্যই নয়, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশিল্পে আগ্রহী সবার জন্য আকর্ষণ। এর কারণে এটি কুষ্টিয়ার অন্যতম পর্যটন গন্তব্যস্থল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন দপ্তর যদি উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা নেয়, তবে এটি বিদেশি ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এ স্থানে এসে ইসলামিক স্থাপত্য ও ইতিহাস সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য জানতে পারবে।
পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঝাউদিয়া মসজিদ গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত। চারপাশে প্রাকৃতিক সবুজ পরিবেশ ও গ্রামের শান্তশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত। কুষ্টিয়া শহর থেকে ঝাউদিয়া গ্রামে আসার জন্য রাস্তাঘাট রয়েছে, তবে সড়ক যোগাযোগ কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির দাবি রাখে। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এখানে পর্যাপ্ত জায়গা ও শৌচাগার নির্মাণের প্রয়োজন।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতা
ঝাউদিয়া মসজিদ পরিদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা ও জীবনযাত্রা পর্যটকদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এখানে ধর্মীয় উৎসব, বিশেষ করে ঈদ ও রমজান মাসে মসজিদের পরিবেশ অত্যন্ত প্রাণবন্ত হয়। পর্যটকরা স্থানীয় হস্তশিল্প, গ্রামীণ খাবার ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোও উপভোগ করতে পারেন।
ঝাউদিয়া মসজিদ শুধু কুষ্টিয়ার নয়, সমগ্র বাংলাদেশের একটি গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক ও পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। সঠিক পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এটি দেশের পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করবে। তাই ঝাউদিয়া মসজিদকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলা প্রয়োজন।