মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল, বিলিয়নিয়ার প্রকাশনা ব্যবসায়ী রবার্ট ম্যাক্সওয়েলের কন্যা, একসময় ছিলেন নিউইয়র্কের হাই-সোসাইটি পার্টির নিয়মিত অতিথি। তারই সঙ্গে বন্ধুত্বে জড়িয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি তখন ম্যানহাটনের রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাচ্ছিলেন। সেই সম্পর্ক এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্সিতে বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি হয়ে উঠছে।
ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে ২০ বছরের কারাদণ্ডে কারাবন্দি, কারণ তিনি সাবেক প্রেমিক জেফরি এপস্টেইনের হয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের যৌন শোষণের জন্য সংগ্রহ করতেন। অন্যদিকে ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এপস্টেইন-ম্যাক্সওয়েল জুটি এবং তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বহু বছরের সম্পর্ক এখন তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, মার্কিন বিচার বিভাগ ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। লক্ষ্য হলো এপস্টেইন সংক্রান্ত তথাকথিত ‘ফাইল’ সম্পর্কে তার কাছ থেকে তথ্য নেয়া। কিন্তু বিচার বিভাগ এবং এফবিআই যখন জানায়, তারা এই বিষয়ে আর কিছু প্রকাশ করবে না এবং এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন—তখন অনেক ‘ম্যাগা’ সমর্থক এটিকে ‘ডিপ স্টেট’ ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করতে শুরু করে।
ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল ও ট্রাম্পের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ ছিল, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৮০-এর দশকে রবার্ট ম্যাক্সওয়েলের বিলাসবহুল ইয়টে এক পার্টিতে দুজনের প্রথম পরিচয় ঘটে বলে ধরা হয়। একাধিক পার্টি, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ব্যক্তিগত নৈশভোজে তাদের একত্রে দেখা গেছে। এমনকি ২০০০ সালে মার-আ-লাগো ক্লাবে একটি পার্টিতে ট্রাম্প, মেলানিয়া, এপস্টেইন ও ম্যাক্সওয়েল একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
ঘিসলেইনের ভাই ইয়ান ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ২০২০ সালে যখন সাংবাদিকেরা ঘিসলেইনের বিচার নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “আমি তাকে অনেক বছর ধরে চিনি। আমি শুধু তার মঙ্গল কামনা করি।” প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে বিস্ময়কর ছিল, কিন্তু ম্যাক্সওয়েল পরিবার একে কৃতজ্ঞতার চোখে দেখছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কারাগারে বন্দি ঘিসলেইন এখন বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি চুক্তির চেষ্টা করছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক এখন সেই আলোচনার প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। ট্রাম্প যদি প্রমাণ করতে পারেন, তিনি এপস্টেইনের অপরাধ থেকে দূরে ছিলেন, তাহলে রাজনৈতিকভাবে এটি হবে বড় জয়। আবার এটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে, ম্যাক্সওয়েল যদি অন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নাম দেন, তাহলে সেটি ট্রাম্পের জন্য লাভজনক হতে পারে।
চূড়ান্তভাবে, দুই দশকের পুরনো এই সম্পর্ক নতুন করে আমেরিকার রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে—যেখানে একজন কারাবন্দি নারী ও আরেকজন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেও, তারা পরস্পরের জন্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়েছেন।