Home Third Lead পেট্রোল পাম্পে ডিজিটাল ঠকবাজি: প্রতিদিনই ঠকছেন আপনি

পেট্রোল পাম্পে ডিজিটাল ঠকবাজি: প্রতিদিনই ঠকছেন আপনি

ছবি: এ আই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশজুড়ে হাজারো পেট্রোল পাম্পে প্রতিদিন লাখো গ্রাহক জ্বালানি সংগ্রহ করছেন। অথচ অজান্তেই অনেকেই প্রতিনিয়ত হচ্ছেন ঠকবাজির শিকার। কম মাপে জ্বালানি সরবরাহ, ডিজিটাল ডিসপ্লের কারচুপি, ভেজাল মিশ্রণ—এই তিনটি প্রধান কৌশলের মাধ্যমে অনেক পেট্রোল পাম্প গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে কিংবা ক্ষতিসাধন করছে।

১. ডিজিটাল কারচুপি:

অনেক আধুনিক পাম্পে ডিজিটাল মিটার থাকলেও ভেতরে লুকিয়ে থাকে সফটওয়্যারের কারসাজি। ‘চিপ হ্যাকিং’ নামে পরিচিত এ প্রক্রিয়ায় মিটারে যে পরিমাণ দেখায়, আসলে ততটা তেল দেওয়া হয় না। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাহক ১০ লিটার পেট্রোলের দাম দিলেও বাস্তবে হয়তো পাচ্ছেন ৯.৫ লিটার। ভিজিল্যান্স বিভাগের একাধিক তদন্তে দেখা গেছে, চিপ মডিউল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে ৩-৫ শতাংশ তেল কম সরবরাহ করা হয়।

২. পরিমাপে কম দেওয়া:

অনেক পুরনো পাম্পে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে ম্যানুয়াল মিটার। সেখানে সচেতনভাবে দ্রুত থামিয়ে দেওয়া হয় সরবরাহ, যাতে প্রদর্শিত লিটারের চেয়ে কিছুটা কম পড়ে। ব্যস্ত গ্রাহক তা বুঝতেই পারেন না। বিশেষত, দুই চাকার যানবাহনের চালকরা সবচেয়ে বেশি শিকার হন এ প্রতারণার।

৩. ভেজাল মিশ্রণ:

অন্য একটি ভয়ংকর প্রবণতা হলো কেরোসিন বা ঘোলাটে সলভেন্ট মিশিয়ে পেট্রোল কিংবা অকটেন বিক্রি করা। এতে গাড়ির ইঞ্জিনে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়। অনেক সময় এই ভেজাল তেলের গন্ধেও পার্থক্য ধরা যায় না। শিল্পাঞ্চল কিংবা গ্রামীণ অঞ্চলের পাম্পগুলোতে এই সমস্যা বেশি লক্ষ করা যায়।

৪. ‘ডিস্ট্রাকশন টেকনিক’ ও ভিজ্যুয়াল বিভ্রান্তি:

কিছু পাম্পে দেখা গেছে, তেল দিতে গিয়ে কর্মীরা সচেতনভাবে গ্রাহকের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরায়—জিজ্ঞাসা করে পয়সা ভাংতি আছে কিনা, হেলমেট খুলতে বলে কিংবা মোবাইল নাম্বার চায়। এ ফাঁকে মিটারে কারচুপি করে। এদের প্রশিক্ষণই দেওয়া হয় কীভাবে গ্রাহকের মনোযোগ সরানো যায়।

৫. নকল ইনভয়েস ও অতিরিক্ত চার্জ:

কিছু কিছু পাম্প ‘হাই-গ্রেড’ পেট্রোল বা অকটেন বলে দাম বেশি রাখে, অথচ কম মানের জ্বালানি সরবরাহ করে। ইনভয়েসে তা স্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় ভোক্তা বিষয়টি বুঝতেই পারেন না।

বিজিএমইএ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দৃষ্টিভঙ্গি:

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি, কিন্তু সীমিত জনবল ও প্রযুক্তির অভাবে অনেক সময় বিস্তারিত তদন্ত করা সম্ভব হয় না।”

কীভাবে রক্ষা পাবেন এই প্রতারণা থেকে:

  • প্রথমেই জ্বালানি নেওয়ার আগে মিটারের রিডিং শূন্য কিনা দেখুন।
  • সম্ভব হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ (যেমন ৫ লিটার বা ১০ লিটার) চেয়ে তুলনা করুন।
  • পেট্রোল নেওয়ার সময় চোখ রাখুন মিটারে এবং সরবরাহকারী কর্মীর গতিবিধিতে।
  • সন্দেহ হলে ইনভয়েস বা রসিদ চাইতে পারেন।
  • ভোক্তা অধিকার হটলাইন বা মোবাইল অ্যাপে অভিযোগ জানান।

এই প্রতারনার বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি ও প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় তদারকি জোরদার না হলে সাধারণ জনগণের পকেট কাটা চলতেই থাকবে।