Home অন্যান্য ‘অন্তঃপুর’-৩ : ঠাকুরঝি ও দাসী—আত্মা ও শরীরের লড়াই

‘অন্তঃপুর’-৩ : ঠাকুরঝি ও দাসী—আত্মা ও শরীরের লড়াই

(যেখানে খোলস ভাঙে, মুখ খুলে অনুভব, এবং প্রথম চুম্বনের ভয় ছায়া হয়ে হাঁটে)

আমিরুল মোমেনিন:

অন্দরমহল যেন এক নীরব সমুদ্র। তার ঢেউগুলো দেখা যায় না, কিন্তু গর্জন থেমে নেই। জমিদারবাড়ির সেই ভেতরের সংসারে একজন ঠাকুরঝি আর একজন দাসীর মাঝে যে দূরত্ব ছিল, তা ছিল চোখে দেখা না গেলেও হৃদয়ে অনুভবযোগ্য। কিন্তু সে দূরত্ব সবসময় শ্রদ্ধা কিংবা শাসনের ছিল না, তা অনেকসময় হয়ে উঠত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রেষ, আবার কোথাও কোথাও আশ্রয় বা অভিন্ন অভিজ্ঞতার বন্ধন।

ঠাকুরঝি ছিল পর্দার অন্তরালে বড় ঘরের মেয়ে—ধর্ম, শুচিতা আর লজ্জার পর্দায় মোড়ানো। দাসী ছিল নিচু ঘরের সন্তান—তার শরীর ছিল শ্রমের, কণ্ঠ ছিল নত, কিন্তু চোখে ছিল সাহসের জ্যোতি।
এই দুই নারী আলাদা ঘরে ঘুমাত, আলাদা জল খেত, কিন্তু রাত নামলে তাদের চোখে ফুটে উঠত এক ধরনের একাকীত্ব, যা সমাজের কোনও ব্যবস্থাপত্রে লেখা ছিল না।

ঠাকুরঝি হয়তো দিনের আলোয় ধর্মগ্রন্থ পড়তেন, কিন্তু দরজার ফাঁকে চোখ রাখতেন—কে এসে কার ঘরে ঢুকছে।
আর দাসী, হয়তো রান্নাঘরে হাড়ি ধুতে ধুতে একফাঁকে মুখ তুলে তাকাত সেপাইবাবুর চোখে—কোনো কিছু চাওয়া ছাড়াই।
এই তাকানোই ছিল বিদ্রোহ। এই দৃষ্টি বিনিময়ই ছিল অব্যক্ত প্রেম, অথবা নিঃশব্দ শরীরী সংঘর্ষ।

একদিন দুপুরে ঠাকুরঝির সিঁথির সিঁদুর উঠে গিয়েছিল, ভিজে গাল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল দাসীকে—
“তুই কখনো কাউকে ভালোবেসেছিস?”
দাসী হেসে বলেছিল,
“ভালোবাসা জানি না, বাটুল মিস্ত্রি হাঁড়ি দিতো হাতে রেখে—ওটাই ভাল লাগতো।”

সেই মুহূর্তে দুই নারীর ভেতরে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা ছিল শুদ্ধ আত্মার এবং আবহমান শরীরের লড়াইয়ের এক অনির্বচনীয় মিশ্রণ।

অন্দরমহলের বদ্ধ জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়ত মাদুরে রোদ—সেই আলোয় কেউ বসে হাত খোপায় রাখত, কেউ চোখ বুজে নিজের শরীরের স্পন্দন টের পেতে চাইত।
এই অন্দরে প্রথম চুম্বন ছিল নিঃশ্বাসে জমে থাকা ভয়।
প্রথম ছোঁয়া ছিল চুপি চুপি ফেলা দীর্ঘশ্বাস।

নারীদের এই গোপন জীবন ছিল শুধু বঞ্চনার নয়, ছিল তীব্র অনুভবের—যা প্রকাশ করতে পারত না, কিন্তু চাপা রাখতে পারত না।


🕯️ পরবর্তী পর্বে:

“গোছানো বিছানা, ভাঙা সম্পর্ক—বড়বউয়ের আত্মঘাতী নীরবতা”
(যেখানে বিছানা থাকলেও ভালোবাসা ছিল না, আর প্রতিদিনের নীরবতা হয়ে উঠত ধ্বংসের পূর্বাভাস।)


এই পর্ব আপনার মনে ছায়া ফেললে শেয়ার করুন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন—কারণ ‘অন্তঃপুর’ কখনও খালি থাকে না।